গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
এখন সপরিবার বিদেশে থাকেন। সেখানেই চাকরি করেন। ২০১২-র ১৬ ডিসেম্বরে সেই ঘটনার একমাত্র সাক্ষী তরুণটিও আজ শান্তি পেলেন। সে রাতে তাঁর উপর অত্যাচারও কম হয়নি।
নির্ভয়া-কাণ্ড নিয়ে তৈরি বিবিসি-র তথ্যচিত্র তাঁর মতে ‘ভুয়ো’, ‘সাজানো’। ২০১৫-র মার্চে ভারতে সেই তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ হওয়ার পরেই মুখ খুলেছিলেন নির্ভয়ার বন্ধু। কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘সে দিন কী হয়েছিল, সেটা শুধু আমরা জানি। তথ্যচিত্রে যা দেখানো হয়েছে, পুরোটাই সাজানো। অর্ধসত্য।’’ ২০১৯-এর নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘দিল্লি ক্রাইম’ নিয়েও একই মত তাঁর। পুলিশ ফাইলের উপর ভিত্তি করে এই সিরিজ় তৈরি বলে নির্মাতারা দাবি করলেও নির্ভয়ার বন্ধু বলছেন, ‘‘পুরোটাই সিনেম্যাটিক। খাপছাড়া সত্যি।’’ সিরিজ়ে তাঁর চরিত্রটিকে যে ভাবে দেখানো হয়েছে তাতেও রুষ্ট নির্ভয়ার বন্ধু। ‘দিল্লি ক্রাইম’ নিয়েও মামলা করার কথা ভাবছেন নির্ভয়ার বন্ধু। ২০১২-র ডিসেম্বরের সেই ঘটনার কথা সাক্ষাৎকারে বলতে গিয়ে যিনি একাধিক চ্যানেলের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন বলে অভিযোগ! বিবিসির লেসলি উডউইনের দাবি, নির্ভয়ার বন্ধু তাঁর তথ্যচিত্রের অংশ হওয়ার জন্যও টাকা চেয়েছিলেন।
২০১৯-এর অক্টোবরে বোমাটা ফাটিয়েছিলেন দু’টি হিন্দি খবরের চ্যানেলের প্রাক্তন সম্পাদক। তাঁর দাবি, এই বিষয়ে নির্ভয়ার ওই বন্ধুর বিরুদ্ধে ‘স্টিং অপারেশন’ চালিয়েছিলেন তাঁরা। সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা নেওয়ার কথা ছেলেটি ‘অন-ক্যামেরা’ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। ঘটনাটা ২০১৩-র সেপ্টেম্বরের। তা-হলে এত দিন পরে কেন তিনি মুখ খুললেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাংবাদিক— ‘‘ওয়েব-সিরিজ়টা দেখেই পুরনো রাগ ও হতাশা চাগাড় দিয়ে উঠল। মনে হল, ছেলেটির চরিত্র সম্পর্কে সকলের জানা উচিত।’’
আরও পড়ুন: পরিবারের পাশে, দোষীদের পাশে কিন্তু নয় মহল্লা
ওয়েব-সিরিজ়টা দেখেছেন নির্ভয়া মামলার প্রধান সাক্ষীও। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে গিয়ে ‘বিরক্ত’ নির্ভয়ার বন্ধু বলেছেন, ‘‘দেখানো হয়েছে, আমি অপরাধীরা ধরা পড়ার আগেই মিডিয়ায় মুখ দেখাতে ব্যগ্র ছিলাম। আদতে তা নয়। ওই ঘটনার তিন সপ্তাহ পরে আমি প্রথম সাক্ষাৎকার দিই। দেব না-ই বা কেন! মানুষকে যে সবটা বলতেই হত।’’ তবে টাকা নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়া নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি।
নির্ভয়া কাণ্ডের বছর ঘোরার আগেই এই বন্ধুকে নিয়ে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল। তাঁর ‘বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার সাহস’ ইত্যাদি নিয়ে দীর্ঘ পোস্ট। দাবি উঠেছিল ১৬ ডিসেম্বরকে ‘বন্ধুত্ব দিবস’ পালন করা হোক।
এখন অবশ্য সেই পোস্ট বিস্মৃতির অতলে। জনসমক্ষে নেই সেই বন্ধুও।