খলিস্তানি নেতা গুরপতয়ন্ত সিংহ পন্নুন। —ফাইল চিত্র।
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রবেশদ্বারেই গ্রেফতার, তার পরে ‘আমেরিকান এজেন্ট’দের হাতে বন্দি। কালো এসইউভি-তে বন্দি অবস্থায় চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের রাস্তায় জেরা, শেষ পর্যন্ত চেক পুলিশের হাতে বন্দি হওয়া। আমেরিকায় খলিস্তানি নেতা গুরপতয়ন্ত সিংহ পন্নুনকে হত্যার চেষ্টায় অভিযুক্ত নিখিল গুপ্ত এমনই ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। পরিবারের এক সদস্যের তরফে করা আবেদনে জানানো হয়েছে, ৩০ জুন নিখিল প্রাগের ভাক্লাভ হাভেল বিমানবন্দরে পা দেওয়ার পরেই হলিউডের থ্রিলারের মতো এই ঘটনা ঘটেছে। সুু্প্রিম কোর্ট এ দিন জানিয়েছে, বিদেশে ধৃত ব্যক্তির বিষয় তাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। নিখিলের পরিবারকে চেক প্রজাতন্ত্রের আদালতে আবেদন জানাতে হবে।
আমেরিকার অভিযোগ, এক ভারতীয় সরকারি কর্মীর নির্দেশে নিখিল ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে পন্নুনকে হত্যার চেষ্টা করেন। সেই ভারতীয় সরকারি কর্মীর পরিচয় প্রকাশ না করে তাঁকে ‘সিসি-ওয়ান’ নামে চিহ্নিত করেছে আমেরিকা।
নিখিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তাঁর পরিবার। কূটনৈতিক সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখেই গুপ্ত পরিবারের যে সদস্য এই আবেদন করেছেন তাঁকে ‘এক্স’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর আবেদনে বলা হয়েছে, নিখিল দিল্লির এক জন ব্যবসায়ী। তিনি আইন মেনে চলা নাগরিক। চেক পুলিশ তাঁকে আটক করার পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাঁর ধর্মাচরণের অধিকার বিঘ্নিত হয়েছে। তিনি এক জন হিন্দু ও নিরামিশাষী হলেও চেক পুলিশের হেফাজতে তাঁকে গোমাংস ও শুয়োরের মাংস খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। বাড়িতে নিখিলের মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছেন।
এ দিন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বিদেশে ধৃত ব্যক্তি তাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। ৪ জানুয়ারি এ নিয়ে শুনানিতে রাজি হলেও শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, নিখিলের পরিবারকে চেক প্রজাতন্ত্রের আদালতে আবেদন করতে হবে। ৪ জানুয়ারির মধ্যেই আবেদন করতে হবে কেন্দ্রের কাছেও। বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রকের কাছে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর’ বলেও মন্তব্য করেছে
শীর্ষ আদালত।
নিখিলকে যে আমেরিকার অনুরোধেই গ্রেফতার করা হয়েছে তা মেনে নিয়েছেন চেক সরকারের মুখপাত্র ভ্লাদিমির রেপকাও। অন্য দিকে ভারতের তরফে বলা হয়েছিল বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। আমেরিকা পন্নুনকে খুনের চক্রান্তকারীর সঙ্গে ভারতের আধিকারিককে জড়িয়ে ফেলছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য ভারত সরকার তদন্ত কমিটিও তৈরি করে। আমেরিকার প্রিন্সিপাল ডেপুটি এনএসএ জোনাথন ফাইনার গত মাসে দিল্লিতে এসেছিলেন। এই ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।
নিখিল গুপ্তের পরিবারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি সাউথ ব্লক। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ক্রমশ এ নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে নয়াদিল্লির। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো বটেই, এ নিয়ে ভোটের আগে দেশের ভিতরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে স্বর তোলার সুযোগ পাবে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। কানাডাবাসী খলিস্তানি জঙ্গিদের নিয়ে সম্প্রতি তিক্ত হয়েছে ভারত-কানাডা সম্পর্ক। কানাডায় খলিস্তানি জঙ্গি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যায় ভারতীয় গুপ্তচরদের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এই অভিযোগের প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত।