প্রতীকী ছবি।
স্কুলশিক্ষায় শিক্ষাদানের পদ্ধতিতে বদল, উচ্চশিক্ষায় মাল্টিপল এন্ট্রি-এক্সিট ব্যবস্থা, উচ্চ শিক্ষাকে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতায় আনা, ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন গঠন— চুম্বকে এটাই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির নির্যাস। বুধবারই এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। ফলে ৩৪ বছর পর ব্যাপক রদবদল হল দেশের শিক্ষাব্যবস্থায়।
আগে শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ছিল ১০+২ ভিত্তিতে। কিন্তু সেই কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে নতুন শিক্ষানীতিতে করা হয়েছে ৫ + ৩ + ৩ + ৪। অর্থাৎ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আরও তিন বছর যোগ করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম তিন বছর প্রাক প্রাথমিক স্তুরের শিক্ষা। এই প্রি-প্রাইমারি স্তরের জন্য সারা দেশে একটি অ্যাকটিভিটি ও লার্নিং বেসড শিক্ষানীতি তৈরি হবে। তার জন্য জাতীয় শিক্ষা মিশন গঠিত হবে। অর্থাৎ মূল যে ১০+২ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল, তা পাল্টায়নি। তবে পরিবর্তন হয়েছে পাঠদানের পদ্ধতিতে এবং কিছু ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমের ধরনে। শিক্ষাসচিব জানিয়েছেন, প্রাক প্রাথমিকের পরের তিন বছর অর্থাৎ প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত দেওয়া হবে সাক্ষরতা ও অক্ষরজ্ঞানের পাঠ। মধ্যম স্কুলের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক আলাদা করে পড়ানো হবে। তার পর নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত একই গোত্রে নিয়ে আসা হয়েছে। মোট আটটি সিমেস্টারে ভাগ করে পড়ানো হবে। ফলে কার্যত দশম শ্রেণির পরীক্ষার গুরুত্ব অনেকটাই কমে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বোর্ড পরীক্ষার গুরুত্ব কমানোর কথা বলা হয়েছে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে।
তবে স্কুল শিক্ষায় বড় পরিবর্তন আসছে বর্তমানের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদানের পদ্ধতিতে। এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থায় দশম স্তর পাশ করার পর বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য এই তিন বিভাগে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু নতুন শিক্ষা নীতিতে এই বিভাগগুলি উঠে যাবে। উদাহরণ দিয়ে স্কুলশিক্ষা সচিব বলেছেন, পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের সঙ্গে বেকারি শিখতে পারে, কিংবা রসায়নবিদ্যার সঙ্গে ফ্যাশন টেকনোলজি পড়তে পারে। একই সঙ্গে সব বিষয় পড়ানো হবে। তার মধ্যে এমনকি সঙ্গীত, খেলাধূলার মতো বিষয়ও থাকবে। এ ছাড়া ভোকেশনাল বিষয় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই শেখানো হবে। এ ছাড়া মূল্যায়ন বিধিতেও কিছু রদবদল হবে। রিপোর্ট কার্ডে পড়ুয়া নিজে, সহপাঠীরা এবং শিক্ষকরা মূল্যায়ন করবেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক পাল্টে হল শিক্ষা মন্ত্রক, অনুমোদন মন্ত্রিসভার
উচ্চশিক্ষাতেও বড়সড় কয়েকটি রদবদলের কথা বলা হয়েছে নয়া শিক্ষানীতিতে। তার মধ্যে অন্যতম মাল্টিপল এনট্রি অ্যান্ড এক্সিট সিস্টেম চালু করা। অর্থাৎ পড়াশোনার মাঝে কোনও পড়ুয়া কোনও কারণে মাঝপথে ছেড়ে দেওয়ার পরে চাইলে আবার সেখান থেকে শুরু করতে পারবেন। সাংবাদিক বৈঠকে উচ্চশিক্ষা সচিব জানিয়েছেন, ব্যবস্থা এমন হবে যে প্রথম এক বছর সম্পূর্ণ করলে সার্টিফিকেট কোর্স, দু’বছরে ডিপ্লোমা এবং চার বছরে ডিগ্রি দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ এক বছর সম্পূর্ণ করার পর ছেড়ে দিয়ে আবার ভবিষ্যতে পড়তে চাইলে ওই প্রথম বছর আর পড়তে হবে না। দ্বিতীয় বছর থেকে শুরু করতে পারবেন। সিমেস্টার ভিত্তিক পঠনপাঠনেও একই নিয়ম কার্যকর করা হবে। তবে সেই গ্যাপ নির্দিষ্ট সময়ের বেশি হবে না।
আরও একটি বদল এসেছে স্নাতকোত্তর ব্যবস্থায়। সেখানে কেউ গবেষণা করতে চাইলে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স করতে পারেন। তিন বছর স্নাতকস্তর এবং এক বছর স্নাতকোত্তর পড়ার পরে সরাসরি পিএইচডি করতে পারবেন। এম ফিল করার প্রয়োজন পড়বে না। এ ছাড়া উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও স্কুলের মতোই ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এডুকেশন’ চালু হচ্ছে। তাতে থাকছে ‘মেজর ও মাইনর’ ব্যবস্থা। অর্থাৎ মূল বিষয়ের সহযোগী বিষয়গুলির পাশাপাশি সঙ্গীত, চিত্রকলার মতো বিষয়ও পড়তে পারবেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন: গ্যাসের ভর্তুকি কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না! রহস্যটা কোথায়?
নয়া শিক্ষানীতিতে আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন-এর ধাঁচে গঠন করা হচ্ছে ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অনুদানের জন্য এই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। তবে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের এই সংস্থার পার্থক্য হচ্ছে বিজ্ঞানের সঙ্গে সমাজবিজ্ঞানও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় নিয়ন্ত্রক হিসেবে ইউজিসি, এআইসিটিই এবং ন্যাশনাল কনসার্ন ফর টিচার এডুকেশন— এই তিনটি সংস্থা রয়েছে। নয়া নীতিতে একটিই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকবে। কলেজগুলির ক্ষেত্রে আরও স্বায়ত্তশাসন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে নতুন নীতিতে। কলেজের গ্রেড অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। ফিজ নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা রয়েছে নয়া ব্যবস্থায়। পুরো ব্যবস্থাপনাই চলবে ‘অনলাইন সেল্ফ ডিসক্লোজার’ ভিত্তিক।