প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
প্রায় চার বছর হতে চলল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর পূর্ব লাদাখ সংলগ্ন অঞ্চলে ভারত ভূখণ্ডে ঢুকে বসে রয়েছে চিনের লাল ফৌজ। দফায় দফায় সামরিক এবং কূটনৈতিক বৈঠকেও তাদের সম্পূর্ণ ভাবে পিছু হটানো যায়নি। লোকসভা নির্বাচনের মুখে আজ চিনকে নিশানা করে বিভিন্ন মঞ্চ থেকে আসর গরম করল সাউথ ব্লক।
অরুণাচল প্রদেশে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি বড় পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এর পরেই বেজিং অরুণাচলকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ বলে পুনরায় সরব হয়। ওই দাবি খণ্ডন করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর দওসওয়াল আজ একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অরুণাচল সফর নিয়ে চিনের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। ভারতের নেতারা অন্যান্য রাজ্য সফরের পাশাপাশি, সময়ে সময়ে অরুণাচল সফর করেন। এই ধরনের সফর বা ভারতের কোনও ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়েই আপত্তি জানানো যুক্তিযুক্ত নয়। এর ফলে বাস্তব বদলাবে না। অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল, আছে এবং থাকবে’। মুখপাত্র এ-ও জানিয়েছেন, ভারতের অবস্থান সম্পর্কে ধারাবাহিক ভাবে চিনকে অবহিত করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইটানগর থেকে ৮২৫ কোটি টাকা খরচ করে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)-এর তৈরি সুড়ঙ্গের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৩ হাজার ফুট দীর্ঘ দুই রাস্তার এই সুড়ঙ্গটি সমস্ত আবহাওয়ায় কাজ করবে এবং তাওয়াং সেক্টরের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার নিকটবর্তী অঞ্চলগুলিতে দ্রুত সেনা ও সরঞ্জাম মোতায়েন করতে পারবে। ২০২০ সালের জুনে শুরু হওয়া লাদাখ সেক্টরে চিনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক অচলাবস্থা অব্যাহত। তারই মধ্যে এলএসি বরাবর পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরকার যে প্রকল্প গ্রহণ করেছিল তারই অংশ এই সুড়ঙ্গ। উভয় পক্ষই লাদাখ সেক্টরে প্রায় ৫০হাজার সেনা মোতায়েন করেছে এবং নয়াদিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা না ফেরা পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনও ভাবেই স্বাভাবিক
করা যাবে না।
একই সঙ্গে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের একটি সম্মেলনে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কাম্বোজ বেজিং-এর নাম না করে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, কিছু রাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার জন্যই পরিষদে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকায় অনেক জঙ্গিকে ঢোকানো যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, “এই ভেটো প্রদানের বিষয়টিই অভিশপ্ত। এই নিয়ে স্থায়ী, অস্থায়ী সব সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। প্রকৃত তথ্য ও নথি থাকা সত্ত্বেও কোনও কারণ না দেখিয়েই আন্তর্জাতিক ভাবে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিরাপত্তা পরিষদের তালিকায় আনা যাচ্ছে না, ভেটো প্রদানের কারণে।’’ এখানেই থেমে থাকেননি রুচিরা। তিনি অভিযোগ করেন, যখনই পরিষদ সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রসঙ্গ ওঠে, তখন তারা দু’রকম কথা বলতে থাকে। আর কত দিন ধোঁয়ার আড়ালে থাকতে হবে! ঘটনা হল, গত বছর ভারত এবং আমেরিকা যৌথ ভাবে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সাজিদ মিরকে নিষিদ্ধ করার জন্য প্রস্তাব জমা দেয়। অভিযোগ, মির ২৬/১১ মুম্বই হামলায় যুক্ত। চিন তাকে ‘টেকনিক্যাল হোল্ড’-এ রাখার পক্ষে ভেটো দিয়ে উদ্যোগে জল ঢেলে দিয়েছিল।
পাশাপাশি, গত কাল একটি আলোচনা সভায় চিন সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি জানিয়েছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এত সেনা মোতায়ন করা চিনের জাতীয় স্বার্থের জন্যও ভাল নয়। তাঁর কথায়, “আমার মনে হয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এত সেনা মোতায়েন না করাটাই উভয়ের দেশের জন্য মঙ্গলের। আমরা যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছিলাম, তাকে মেনে চলাই উভয়ের পক্ষে ভাল। গত চার বছরে সীমান্তে যে সংঘাত দেখছি তা কারও জন্যই শুভ নয়।”