ফাইল চিত্র।
আমেরিকার নজরদারি এবং রক্তচক্ষুর মধ্যেই রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু তার দাম শোধ করার মেকানিজমটি নিয়ে সঙ্গত কারণেই বাইরে খুব বেশি হইচই করতে চাইছে না সাউথ ব্লক। কূটনৈতিক সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির আগে পর্যন্ত এই নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হবে না সাউথ ব্লক।
রাশিয়ার উপর আমেরিকার আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলারের মাধ্যমে নয়াদিল্লি-মস্কো বাণিজ্য আর করা চলছে না। সে ক্ষেত্রে দু’দেশের সাবেকি ‘রুপি-রুবল’ মেকানিজমটিকেই আবার চাঙ্গা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
এ ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী সম্প্রতি জানান, কী ভাবে রাশিয়াকে তেলের দাম শোধ করা হবে, সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রক কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা আলোচনা করছেন। নির্মলা এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবেন।
সূত্রের মতে, এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হল, কবে এই তেলের দাম দেওয়া শুরু হবে, তা নিয়ে বাইরে কিছু বলবে না ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরতি না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন তথা তেলের দাম ফেরত দেওয়া নিয়ে মুখ খোলা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। আমেরিকা তথা পশ্চিমের বক্তব্য, যুদ্ধচলাকালীন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া এবং তাদের অর্থের জোগান দেওয়ার অর্থ, ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেওয়া। যুদ্ধে ইন্ধন দেওয়া। এ কথাও আমেরিকার কর্তারা হুঁশিয়ারির সুরে বলছেন, এখন যারা রাশিয়াকে কোনও না কোনও ভাবে সহায়তা করবে, তাদের ফল ভোগ করতে হবে।
আলাদা করে ভারতও মনে করে, অবিলম্বে যুদ্ধ এবং হিংসা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এই নিয়ে একাধিক বার রাষ্ট্রপুঞ্জে সরব হয়েছেন ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি। এমনকি রাশিয়াকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সাসপেন্ড করার পিছনে ভারতের পরোক্ষ সহযোগিতাও রয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্র এটাও মনে করে, ভূকৌশলগত ক্ষেত্রে অবস্থান নেওয়া বা ভারসাম্য বজায় রাখা এক বিষয়। আর তেলের এই তীব্র মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে জাতীয় চাহিদা ও স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সস্তায় অশোধিত তেল আমদানি করার নীতি, অন্য বিষয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের দেশের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু তার জন্য যেন আন্তর্জাতিক মহলে ভুল বার্তা না যায়, সে দিকটি নিয়েও সচেতন থাকতে চাইছে ভারত। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, গত কয়েক বছর ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য মেকানিজমের অনেক খুঁটিনাটি প্রকাশ্যে আনা হয় না। এ ব্যাপারে নীরব থাকাই ভূকৌশলগত কারণে শ্রেয় বলে মনে করে নয়াদিল্লি।