(বাঁ দিক থেকে) অভিযুক্ত মনোজ সানে। মনোজদের ফ্ল্যাট এবং মনোজের লিভ ইন সঙ্গী সরস্বতী বৈদ্য। —ফাইল চিত্র।
দু’চার দিন ধরে পচা গন্ধ পাচ্ছিলেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা সকলেই ভেবেছিলেন ইঁদুর মরেছে কোনও ফ্ল্যাটে। সেই ‘মরা ইঁদুরের’ গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়েই ফ্ল্যাট নম্বর ৭০৪-এর কাছে যেতেই থমকে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। গন্ধটা আরও তীব্র হয়েছিল ওই ফ্ল্যাটের কাছে আসতেই। আর সেই ‘মরা ইঁদুরের’ গন্ধই ধরিয়ে দিয়েছে মনোজ সানেকে। মুম্বইয়ের বোরিভালিতে লিভ ইন সঙ্গীর খুনে দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ডের ছায়া দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মীরা রোডের গীতানগর এলাকার একটি আবাসনের আটতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন মনোজ এবং তাঁর সঙ্গী সরস্বতী বৈদ্য। ফ্ল্যাট নম্বর ৭০৪। মনোজরা ছাড়াও আবাসনের ওই তলে আরও তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে— ৭০১, ৭০২ এবং ৭০৩। ওই তিন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা প্রথমে হালকা পচা গন্ধ পাচ্ছিলেন। প্রত্যেকেই ভেবেছিলেন হয়তো ওই আটতলার কোনও না কোনও ফ্ল্যাটে ইঁদুর মরেছে। ফলে তিন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নিজেদের ঘরদোর খতিয়ে দেখেন। কিন্তু ইঁদুর কোথাও খুঁজে পাননি। যত দিন এগিয়েছে, গন্ধটা অসহ্য হয়ে উঠেছিল। ওই তিন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা মনোজকে বিষয়টি বলেন। কিন্তু তিনি বিশেষ পাত্তা দেননি।
ফ্ল্যাট নম্বর ৭০৩-এর বাসিন্দা অনু শ্রীবাস্তব টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে বলেন, “আমরা তিন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা খুবই ঘনিষ্ঠ। কিন্তু মনোজ এবং সরস্বতী খুব একটা মেলামেশা করতেন না। মরা ইঁদুরের খোঁজে আমরা আমাদের ফ্ল্যাটগুলি পরিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু ৭০৪ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের এ বিষয়ে প্রথম দিকে বলিনি।” অনু জানান, সোমবার হালকা গন্ধ পাচ্ছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সেই গন্ধটা বেড়েছিল। বুধবার অসহ্য হয়ে উঠেছিল।
৭০১ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নীরজ শ্রীবাস্তব বলেন, “যখন আমাদের তিন ফ্ল্যাটে মরা ইঁদুর খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখন আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, গন্ধ আসছে ৭০৪ নম্বর ফ্ল্যাট থেকেই।” এর পরই ওই তিন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা মনোজের ফ্ল্যাটের সামনে যান। সেখানে যেতেই গন্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। শুধু তাই-ই নয়, নীরজদের দাবি, ফ্ল্যাটের সামনে থেকে পচা গন্ধের পাশাপাশি রুম ফ্রেশনারেরও গন্ধ ভেসে আসছিল। আর তা থেকেই সন্দেহ হয় তিন ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের। তার পরই তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই হতভম্ব হয়ে যায়। ঘরে চাপ চাপ রক্ত। পচা গন্ধে ভরে উঠেছে গোটা ঘর। রান্নাঘর এবং বাথরুমে উঁকি দিতেই তারা দেখতে পায়, বালতির মধ্যে রাখা টুকরো টুকরো করে রাখা মানুষের হাত-পা এবং দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ জুন লিভ ইন সঙ্গী সরস্বতীকে খুন করে তাঁর দেহ টুকরো করে কাটেন মনোজ। তার পর কিছু দেহাংশ প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করেন।