মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে সরস্বতী বৈদ্যের দেহাংশ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ (বাঁ দিকে)। খুনে অভিযুক্ত মনোজ সানে (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি এইচআইভি আক্রান্ত। একত্রবাসের সঙ্গিনীর সঙ্গে কোনও শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। ‘মেয়ের মতো’ দেখতেন ৩২ বছরের সরস্বতী বৈদ্যকে। পুলিশি জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন মুম্বইয়ে একত্রবাসের সঙ্গিনী খুনে অভিযুক্ত মনোজ সানে।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিক বলেছেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তের সময় সানে পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি এইচআইভি আক্রান্ত। ২০০৮ সালে সে কথা জানতে পারেন। সেই থেকে চিকিৎসা চলছে।’’ পুলিশকে ৫৬ বছরের সানে আরও জানিয়েছেন, অতীতে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। সে সময় রক্ত দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তখনই এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, সানে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, সরস্বতী খুব ‘পজেসিভ’ ছিলেন। তাঁর অধিকারবোধ খুব বেশি ছিল। তিনি কাজ থেকে একটু দেরি করে ফিরলেই সন্দেহ করতেন। মনে করতেন, অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তাঁর। সানে জেরায় আরও জানিয়েছেন, ৩২ বছরের সরস্বতী দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। সানে তাঁকে অঙ্ক শেখাতেন। মীরা রোডের গীতা আকাশদীপের আট তলার যে ফ্ল্যাটে সানে এবং সরস্বতী থাকতেন, তার একটি দেওয়ালে একটি ব্ল্যাকবোর্ডও দেখতে পেয়েছে পুলিশ। সেই বোর্ডে অঙ্ক কষে রাখা ছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি রেশন দোকানে কাজ করতেন সানে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। তার পরেও ভাল কোনও চাকরি পাননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে মুম্বইয়ের বোরিভলির একটি রেশন দোকানে সরস্বতীর সঙ্গে দেখা হয় সানের। তখন তিনি ওই দোকানে কাজ করতেন। ২০১৫ সাল থেকে তাঁরা একত্রবাস শুরু করেন। মীরা রোডের গীতা আকাশদীপ আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন। তখন জি উইংয়ে থাকতেন। ২০১৭ সালে ওই আবাসনেরই জে উইংয়ের আট তলার ফ্ল্যাটে উঠে আসেন তাঁরা।
৭ জুন ওই ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ বার হতে থাকে বলে থানায় অভিযোগ জানান অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। পুলিশ দরজা ভেঙে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। সানে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় লিফ্টে আটক করে পুলিশ। ১৬ জুন পর্যন্ত সানেকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সরস্বতীকে খুন করে তাঁর দেহ গাছ কাটার বৈদ্যুতিন করাত দিয়ে টুকরো করেন সানে। তার পর কিছু অংশ প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে পথকুকুরদের খাইয়ে দেন বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশি জেরায় সানে দাবি করেছেন, সরস্বতী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। ফিরে এ সব দেখে ভয় পেয়ে যান। তাই দেহ লোপাটের চেষ্টা করেন। পুলিশ সানের ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে তিন বালতি রক্ত পেয়েছে। তার মধ্যে দেহাংশও পেয়েছে। সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।