প্রতীকী ছবি।
কয়লা, ডিজেলের ধোঁয়ায় প্রতি মিনিটে ৫ জনের অকালমৃত্যু হয় ভারতে। কোনও দুরারোগ্য রোগ বা দুর্ঘটনার কারণে নয়। শুধু জ্বালানির ধোঁয়াই প্রতি দিন হাজার হাজার ভারতবাসীকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে। ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় সামনে এসেছে এই তথ্য। সমীক্ষাটি করেছেন হার্ভার্ড-সহ চারটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, কয়লা-ডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ধোঁয়ায় এক বছরে বিশ্বে ৮৭ লক্ষের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। আর এর মধ্যে মৃত্যু সংখ্যার গড়ের নিরিখে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। শুধুমাত্র ভারতেই জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণে অকালে মারা গিয়েছেন ২৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। যা বিশ্বের মোট মৃত্যু সংখ্যার ৩০.৭ শতাংশ।
সমীক্ষাটির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ জার্নালে। গবেষকরা জানিয়েছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির জেরে ভারতের বাতাসে ক্রমাগত বাড়ছে পিএম ২.৫ কণার পরিমাণ। আর এই পিএম ২.৫ এর সংস্পর্শে এসেই অকাল মৃত্যু হচ্ছে লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর। সমীক্ষা এ-ও বলছে যে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভারতে পিএম ২.৫ কণার পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। সমীক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটির এক লেখক চিকিৎসক এলয়েস মারায়েস জানিয়েছেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ ও তার জেরে হওয়া অকাল মৃত্যুর পরিসংখ্যানের সপক্ষে প্রচুর তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে গবেষকদের হাতে। যা দেখে স্পষ্টতই বলা যায় যে জীবাশ্ম জ্বালানি এর আগে আমাদের যতটা ক্ষতি করত বলে মনে করা হত, আদতে তার দ্বিগুণ ক্ষতি করতে পারে’। প্রতিবেদনে মারায়েসের পরামর্শ, ব্যাপারটা জেনে বুঝেও যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়েই চলি, তাহলে সেটা আত্মহত্যারই সামিল। বিশেষ করে যখন আমাদের হাতে কম দূষণের জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ এবং যোগান দুই-ই আছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এই গবেষণায় যোগ দিয়েছিল লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন। গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী বাতাসে পিএম ২.৫ কণার প্রভাবে ভারতে যে ২৪ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে সবার আগে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। দ্বিতীয় স্থানে বিহার এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ ছাড়া প্রথম দশের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা, কর্নাটক, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশা।