NCERT Syllabus

সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে এ বার কুরুক্ষেত্র, রাম-সীতা! সুপারিশ এনসিইআরটি-র, কটাক্ষ বিরোধীদের

বিজেপি নেতারা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ইতিহাস আর পুরাণ গুলিয়ে দিতে চাইছে। শিক্ষার গৈরিকীকরণ করতে চাইছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। নতুন সংসদ ভবনে রামায়ণ-মহাভারতকে ‘ইতিহাস’ হিসেবে তুলে ধরেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার সেই রামায়ণ-মহাভারতকে সমাজবিজ্ঞানের বইয়েই অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করল ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) সংস্থার নিয়োগ করা কমিটি।

Advertisement

বিজেপি নেতারা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ইতিহাস আর পুরাণ গুলিয়ে দিতে চাইছে। শিক্ষার গৈরিকীকরণ করতে চাইছে। অন্য দিকে এনসিআরটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রস্তাবটি আগেই জমা পড়েছিল। এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ এখনওকরা হয়নি।

স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম সংশোধনের লক্ষ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছিল এনসিইআরটি। সেই কমিটির প্রধান তথা ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক সি আই আইজাক আজ বলেন, ‘‘সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাসে রামায়ণ-মহাভারত পড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। এতে অল্প বয়স থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মসম্মান ও নিজেদের জাতির জন্য গর্ববোধ তৈরি হবে।’’ আইজাকের দাবি, এর ফলে ভবিষ্যতে ব্রেন ড্রেন বা বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে।

Advertisement

বর্তমানে দেশের অনেক স্কুলেই রামায়ণ-মহাভারত পড়ানো হয়। আইজাকের প্রশ্ন, ‘‘মহাকাব্যকে মিথ বা পুরাণ হিসাবে কেন পড়ানো হবে? যদি শিক্ষার্থীরা এ ধরনের মহাকাব্য থেকে কিছু শিখতেই না পারে, তা হলে সেই শিক্ষাব্যবস্থা অর্থহীন।’’ তিনি প্রাচীন ইতিহাসের নামকরণ বদলিয়ে ক্লাসিক্যাল বা ধ্রুপদী করার সুপারিশও করেছেন। এই সুপারিশকে বাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘রামায়ণ-মহাভারত বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মহাকাব্য। যা এ দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা বলে। অতীতে কংগ্রেস আমলে ইতিহাসের কার্যত ইসলামিকরণ হয়েছিল। তা শুধরে নেওয়া হচ্ছে।’’ অন্য দিকে শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মকে টেনে আনার সমালোচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, ‘‘অতীতেও বিজেপি আমলে শিক্ষায় গৈরিকীকরণের চেষ্টা হয়েছে। এই সরকার তো ইতিহাসকেই পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ কিন্তু সব পরিবর্তন আদৌ পছন্দকরে না।’’

সমাজবিজ্ঞান হিসেবে রামায়ণ-মহাভারত পড়ানোর ভাবনার বিরুদ্ধে মুখ খুলে জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক তনিকা সরকারের বক্তব্য, ‘‘এই দুই মহাকাব্য অবশ্যই দেশজ সংস্কৃতির অঙ্গ। কিন্তু মূলত এগুলি ব্রাহ্মণ্য ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মগ্রন্থগুলিকে মিথ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। সেগুলিকে সমাজবিজ্ঞানের আওতায় নিয়ে এলে কি গৌরববৃদ্ধি হবে? সমাজবিজ্ঞান তথ্যনির্ভর বিষয়। মহাকাব্যে বর্ণিত ঘটনা তথ্য দ্বারা যাচাই করা সম্ভব নয়। এ সব গ্রন্থ যদি পড়াতেই হয়, তা হলে রিলিজিয়াস স্টাডি-র মতো একটি বিষয়রাখলেই হয়। যেখানে রামায়ণ-মহাভারতের মতোই অন্য ধর্মের গ্রন্থও পড়ানো হবে।’’

এ বিতর্কের মধ্যে কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটেছে এনসিইআরটি নিজে। সূত্রের মতে, এই সংস্থা গত অগস্টে যে প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে রামায়ণ-মহাভারতকে সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করার কোনও উল্লেখ নেই। তা হলে আইজাক এ কথা বললেন কেন? বিরোধীদের মতে, আগামী মাসে রামমন্দির উদ্বোধন। তার আগে হাওয়া গরম করাই লক্ষ্য গেরুয়া শিবিরের। আর মহাকাব্য পড়লে ব্রেন ড্রেন কমবে এই যুক্তির পাল্টা হিসেবে বিরোধীদের বক্তব্য, অধিকাংশ পড়ুয়া ভাল গবেষণা করার লক্ষ্যে বিদেশ যান। দেশে উচ্চশিক্ষায় উন্নত পরিকাঠামো তৈরি হলেই ব্রেন ড্রেনের ঘটনা কমে যাবে। মহাকাব্য পড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত সে দিকে নজর দেওয়া।কমিটির সুপারিশে সুভাষচন্দ্র বসুর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবন ইতিহাসে আরও বিস্তারিত ভাবে পড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশটি প্রতিটি রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষায় স্কুলের দেওয়ালে লিখে রাখার প্রস্তাবও রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement