ফাইল চিত্র
আগামী ছ’মাসের মধ্যে এ দেশে করোনা অতিমারি চরিত্র খুইয়ে স্থানীয় রোগে পরিণত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করলেন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি) অধিকর্তা সুজিত সিংহ। এর অর্থ বর্তমানে যে করোনা অতিমারি আকারে রয়েছে তা আগামী ছ’মাসের মধ্যে জ্বর, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো স্থানীয় রোগে পরিণত হবে যা আর পাঁচটা রোগের মতোই সামলানো সম্ভব হবে।
এ বছরের শেষে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে রেখেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে দক্ষিণে কেরল, পশ্চিমে মহারাষ্ট্র ও উত্তর পূর্বে মিজোরাম-এই রাজ্যগুলির করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগে রেখেছে কেন্দ্রকে। এই মুহূর্তে দেশের ৩৪টি জেলায় দশ শতাংশের বেশি ও ৩২টি জেলায় পাঁচ শতাংশের বেশি করোনা সংক্রমণ রয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে সংক্রমণ পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে বলে দাবি করেছে কেন্দ্র। যদিও সুজিত সিংহের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে হলেও, আসন্ন উৎসবের মরসুম আমাদের চিন্তায় রেখেছে। এ বছর অন্তত বাড়ি থেকেই উৎসব পালন করা উচিত দেশের মানুষের।’’ সুজিতের মতে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেকটাই শক্তি খুইয়েছে করোনা। পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতিগুলি সংক্রমণের প্রশ্নে তেমন শক্তিশালী নয়। যে কোনও অতিমারিই একটি জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশকে সংক্রমিত করার পরে স্থানীয় রোগে পরিণত হয়। করোনা সেই পথেই এগোচ্ছে। নতুন করে আর ঢেউ না এলে আগামী দিনে করোনা একটি সাধারণ রোগে পরিণত হবে বলেই মনে করছেন সুজিত। বিশেষত রোগী মৃত্যুর হারকে যদি একেবারে কমিয়ে ফেলা যায় সে ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ নিয়ে আগামী দিনে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ থাকবে না।
করোনাকে ঠেকাতে মূলত টিকাকরণের উপরেই জোর দিয়েছেন সুজিত সিংহ। তাঁর মতে, ইতিমধ্যেই দেশের ৭৫ কোটি মানুষ টিকা নিয়েছেন। যদি প্রতিষেধকের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ ধরে নেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে অন্তত ৫০ কোটি মানুষের দেহে করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও অনেকে যে করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন তা স্বীকার করে নিয়েছেন সুজিত। তাঁর কথায়, ‘‘টিকা নেওয়ার পরে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। ওই ব্রেক থ্রু ইনফেকশন-এর জন্য দায়ী হল করোনার নতুন প্রজাতির ভাইরাস। কারণ টিকা নেওয়ার ৭০-১০০ দিন পরে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই টিকা নেওয়ার পরেও করোনা বিধি মেনে চলা আবশ্যক।’’
স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, আশার কথা হল এই মুহূর্তে দেশে নতুন করে আর কোনও করোনা ভাইরাসের প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ আমেরিকায় যে নতুন মিউ প্রজাতি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সেটির ভারতে উপস্থিতির প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। সুজিতের মতে, কেবল নতুন কোনও প্রজাতি ভারতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আনতে পারবে না। তার সঙ্গে কোভিড বিধি মেনে চলা, টিকাকরণের পরে শরীরে কী পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়ে যাচ্ছে এবং উৎসবের মরসুমে দেশের মানুষ নিয়ম মেনে চলছেন কি না তার উপরেও তৃতীয় ঢেউয়ের আসা অনেকটাই নির্ভর করছে।