সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী। নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
মোদী-মোদী-মোদী…।
কোনও সভায় এই রবটি কতটা জোরালো, তা শুনেই নাকি জনতার নাড়ি টের পেয়ে যান নরেন্দ্র মোদী। আর যবে থেকে নোট বাতিলের ঘোষণা হয়েছে, ‘মোদী-মোদী’ রবটি নাকি এখন আরও তীব্র আর স্বতঃর্স্ফূত হয়েছে। সাধারণ মানুষের ‘মোদী-রবে’র ভরসাতেই গতকাল দলের নেতাদের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীরা যাই বলুক, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার পিছু হটবে না। কারণ সাধারণ মানুষ সরকারের সঙ্গে আছে।
উত্তরপ্রদেশে মোদীর সভা আয়োজন করেন, এমন এক বিজেপি নেতা আজ বললেন, স্বচ্ছতা অভিযানের ডাক বা সেনা অভিযানের ঘটনা জনতাকে এতটা আলোড়িত করেনি। কিন্তু নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সবাই নড়েচড়ে বসেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং তা ভাল হোক বা মন্দ, সবাইকে এই সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করছে। তাই এই সিদ্ধান্তকেই পুঁজি করে এ বার নিজের ভাবমূর্তি শান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদী।
লোকসভার আগে প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি এলেই আসবে ‘অচ্ছে দিন’। আসেনি। দেশের আর্থিক হাল রাতারাতি বদলের কথা বলেছিলেন। হয়নি। পায়ের তলার মাটি যে খসছে, দিল্লি ও বিহারের ভরাডুবি চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনে তাই মরণ-বাঁচন লড়াই। কিন্তু মেরুকরণ, সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’— কোনও পন্থাই ‘ব্র্যান্ড মোদী’কে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
তাই মোদীর ভরসা এখন পাঁচশো-হাজারের নোট বদল। কারণ, এই সিদ্ধান্তের ফলে তিনি নিজেকে গরিবদের ‘মসিহা’ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছেন। টাকা পেতে মানুষের ভোগান্তি হলেও তিনি সভায় সভায় গিয়ে বলছেন, গরিবরা একটু ‘কড়া’ চায়ের মতো কড়া দাওয়াই পছন্দ করেন। বরং বড়লোকদেরই অসুবিধা হচ্ছে বেশি। তাঁদের ঘুম ছুটেছে। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘আসলে গরিবরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে বড়লোকদেরই মুশকিল হবে। সেটাই তাঁদের কাছে তৃপ্তির বিষয়।’’ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে আজ জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে একটি সংস্থা দিল্লি ও কলকাতা–সহ দেশের দশটি শহরে একটি সমীক্ষা করে। প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের মধ্যে করা এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৮২ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মোদীর এই সিদ্ধান্তে বিরোধীরা তো বিপাকে পড়েইছে, বিজেপি এবং আরএসএসও এতে খুব খুশি নয়। কারণ, যে রাজনৈতিক দলই হোক না কেন, কম-বেশি কালো টাকা সকলের কাছেই রয়েছে। প্রকাশ্যে সকলেই মোদী-বন্দনা করলেও বিজেপির অনেক নেতা ঘরোয়া স্তরে নিজেদের উষ্মা প্রকাশ করতে থামছেন না।
এমনই এক ক্ষুব্ধ নেতার মতে, ‘‘এক সময় অটলবিহারী বাজপেয়ী নিজেকে এমন ভাবে মেলে ধরতেন যে, গোটা দলে তিনিই একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ নেতা। নরেন্দ্র মোদী এখন সে ভাবে ‘আমি-আমি’ রোগে আক্রান্ত। তিনিই যেন দলে একমাত্র সমাজ সংস্কারক, সৎ নেতা এবং গরিবের মসিহা।’’ এই নেতার মতে, ‘‘বিজেপির ব্যবসায়ী ভোটব্যাঙ্ক চুলোয় যাক তো যাক, মোদী রেয়াত করছেন না। অথচ এই ভোটব্যাঙ্ক পেতে পরে দলকেই চাপ দেওয়া হবে।’’ আরএসএসের অসন্তোষ কালই প্রকট হয়েছে। মোদীর সিদ্ধান্তের ধাক্কায় থমকে গিয়েছে দিল্লিতে তাদের নতুন ভবনের কাজ।
যদিও মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ মনে করছেন, পুরোদস্তুর গোপনীয়তা বজায় রেখে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তই নরেন্দ্র মোদীর ‘মাস্টারস্ট্রোক’। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে যদি দলের প্রচার হয়, তা হলে ক্ষতি কী!