—ফাইল চিত্র
নতুন বছরের প্রথম দিনই ভোটমুখী তিন রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে ভিডিয়ো মাধ্যমে দীর্ঘ সময় কাটালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর আজ প্রথম বার দেশের কৃষক এবং কৃষি উৎপাদক সংস্থাগুলির সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিতে দেখা গেল তাঁকে। সেই সঙ্গে বছরের প্রথম দিনে পিএম-কিসান যোজনার দশম কিস্তি হিসাবে, দেশের ১০ কোটি কৃষক পরিবারকে ২০০০ টাকা করে, মোট ২০ হাজার কোটি টাকা তুলে দিতেও দেখা গেল তাঁকে।
মোদী তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় দেশের ছোট চাষি এবং অন্নদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার বার্তা দিলেন আজ। যদিও ভোটমুখী তিনটি রাজ্য— পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের কৃষিপণ্য উৎপাদক সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গেই মূলত কথা বলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এই কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিই গত এক বছর কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে নানা ভাবে জড়িয়ে ছিল। রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, এ দিন কথা বলে তাদের মন জয় করতে চেয়েছেন মোদী। এ ছাড়াও, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে কৃষক মন থেকে এক বছরের দীর্ঘ আন্দোলনের বাষ্প দূর করে নতুন আশ্বাস এবং উদ্দীপনা সঞ্চালনার বাড়তি প্রয়াস শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী। বছরের গোড়াতেই ২০ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের ব্যাঙ্ক খাতায় পৌঁছে দেওয়াটা তারই অঙ্গ বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের নবীন কিসান প্রোডিউসার কোম্পানি, উত্তরখণ্ডের জীব-অমৃত অর্গানিক ফার্মার প্রডিউসার, পঞ্জাবের ভীরাপান্ডি কালানিজা জিভিদাম প্রোডিউসার কোম্পানির মতো কৃষি উৎপাদক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ কথা বলেন মোদী। বেশ কয়েক জন কৃষকের সঙ্গেও ভিডিয়ো কলে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই ভার্চুয়াল বৈঠকে দেশের ৩৫১টি কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী সংস্থাকে ১৪ কোটি টাকার
ইকুইটি অনুদানও দিয়েছেন মোদী।
এর ফলে ১ লক্ষ ২৪ হাজার কৃষক উপকৃত হবেন বলে জানান তিনি। এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ৯টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি, বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও কৃষির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিরাও
উপস্থিত ছিলেন।
মোদী এ দিন বলেন, “জৈব ফসল, বাঁশ, মধু উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের কৃষকরা এই সংস্থাগুলির দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত হন। তবে দেশে আমরা অনেক কিছুই উৎপাদন করি, যেগুলির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়
ভোজ্য তেলের কথা। অনেক বিদেশি মুদ্রা ব্যয় হয় এর আমদানিতে।
স্থানীয় কৃষকদের সুবিধার্থে আমরা ন্যাশনাল পাম অয়েল মিশনের উপর জোর দিচ্ছি। তা শুধু আমাদের আত্মনির্ভরই করবে না, কৃষকদের আয়ও বাড়াবে।”
কৃষকদের এই মঞ্চকে ব্যবহার করে মোদী আজ বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সরকারের গত এক বছরের বিভিন্ন কাজকর্মের খতিয়ান দিয়েছেন। তার মধ্যে যেমন রয়েছে কোভিড মোকাবিলার মতো বিষয়, তেমনই আন্তর্জাতিক স্তরে পরিবেশ বিষয়ে ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার কথাও।
সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেন, ‘‘নতুন বছরের প্রথম দিনে, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা প্রায় ১০ কোটি কৃষক পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। কৃষকদের দ্বিগুণ আয়ে সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে পিএম-কিসান কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল।’’ কৃষি মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি চালু হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত ১.৬১ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। তাতে লাভবান হয়েছেন দেশের ১১.৫ কোটি কৃষক।