ছবি: পিটিআই।
মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণের পর এ বার সরকারের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ১০ অগস্ট থেকে ওই বৈঠক চলবে তিন দিন।
সংসদের অ্যানেক্সি ভবনে ওই বৈঠকে ২০২৪ সালে জয়লাভের লক্ষ্যে সরকার কোন বিষয়গুলিতে অগ্রাধিকার দিয়ে এগোতে চাইছে, সেই রূপরেখা এখন থেকেই স্থির করে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। কাল, রবিবার মন্ত্রিসভাকে চায়ের নিমন্ত্রণে ডেকেছন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও।
পেগাসাস কাণ্ডের জেরে সংসদ চালাতে গিয়ে এক দিকে ত্রাহি দশা, অন্য দিকে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে অনড় কৃষকেরা, আছড়ে পড়ার অপেক্ষায় করোনার তৃতীয় ঢেউ, লাগাতার লকডাউনে গতি হারানো আর্থিক কর্মকাণ্ড— সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মধ্যে নানাবিধ সমস্যায় রীতিমতো জেরবার মোদী সরকার। এ দিকে ছয় মাসের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। তিন বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচন।
এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে উন্নয়নকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং বিশেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের জন্য ভবিষ্যত লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী। সূত্রের মতে, তিন দিনের ওই বৈঠকে প্রত্যেক মন্ত্রীকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে তিন বছরে সেই মন্ত্রকের কাছ থেকে কী ধরনের কাজ প্রত্যাশা করছে সরকার।
বিজেপির এক নেতার কথায়, প্রতিটি মন্ত্রীকে বিশেষ ভাবে নিজের মন্ত্রকের কাজের বিষয়গুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে বলা হয়েছে। আগামী ১০-১২ অগস্ট তিন দিন সংসদের প্রাত্যহিক অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে সন্ধ্যা ছ’টা থেকে বৈঠক হবে। বৈঠকে মন্ত্রকের কাজের লেখাজোকা নিয়ে পর্যালোচনার সঙ্গেই বর্তমান মাপকাঠিতে কোন মন্ত্রক কোথায় রয়েছে এবং আগামী তিন বছরে মন্ত্রককে কতটা পথ পেরোতে হবে, তা বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপি নেতারা ঘরোয়া মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই প্রথম নানাবিধ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে বেকায়দায় সরকার। বিশেষ করে কোভিড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে কৃষকদের বিক্ষোভ, মানুষের কাজ হারানোর মতো সমস্যার কী ভাবে সমাধান হবে, তার স্পষ্ট দিশা নেই সরকারের কাছে। এক বিজেপি নেতার কথায়, প্রধানমন্ত্রী ডজনখানেক মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে বোঝাতে চান যে প্রত্যাশিত ফল না পেলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। সেই কারণেই স্বাস্থ্য, রেল, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে নতুন মুখকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে, যাতে ব্যর্থতার জন্য সরাসরি সরকারের দিকে আঙুল না ওঠে। পরিবর্তে রাজ্যগুলির নির্বাচনকে মাথায় রেখে, জাত-পাতের সমীকরণ মেনে নতুন মুখকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বার সেই মন্ত্রীদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পালা।
সূত্রের মতে, করোনার কারণে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় আত্মনির্ভর ভারত নীতির উপরে জোর দেওয়ার পক্ষপাতী মোদী। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে যাতে উৎপাদন ও কাজের সুযোগ বাড়ে, সে ভাবেই পরিকল্পনা রচনায় জোর দিতে চাইছেন মোদী-অমিত শাহেরা। উত্তরপ্রদেশের মতো যে রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে।
বিজেপি সূত্রের মতে, আত্মনির্ভর ভারত নীতি মেনে সরকার স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে সরকারি পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পক্ষপাতী সরকার। আগামী দিনে যাতে সাধারণ মানুষের আয়ের সুযোগ বাড়ে এবং একই সঙ্গে আত্মনির্ভর হতে পারে দেশ— এমন ভাবে পরিকল্পনা রচনায় মন্ত্রকগুলিকে দিশা দেখাতে চাইছেন মোদী।