ফাইল চিত্র।
জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে রোমে এসে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কোভিড অতিমারির ধাক্কা সামলে বিশ্ব স্বাস্থ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আলোচনা এই বৈঠকে গুরুত্ব পাবে। স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়েও কথা হবে। রোম থেকেই মোদী যাবেন গ্লাসগো। স্কটল্যান্ডের ওই শহরে ১ ও ২ নভেম্বরে জলবায়ু সংক্রান্ত ‘কনফারেন্স অব পার্টিজ়’ (সিওপি২৬) সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
অতিমারির শুরু ইস্তক এই প্রথম সশরীরে রাষ্ট্রনেতারা জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। মোদী জানিয়েছেন, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অতিমারির ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে মজবুত করার লক্ষ্যে জি-২০ গোষ্ঠী কী ভূমিকা নিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। এ ছাড়া, বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে পার্শ্ব বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়েও কথা বলবেন তিনি। রোমে পৌঁছে প্রথমে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েন এবং ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেলের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অতিমারি, জলবায়ুর পরিবর্তন-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন মোদী। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ১০০ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান উরসুলা।
পরে ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিয়ো দ্রাঘির বাসভবনে তাঁর সঙ্গেও বৈঠকে বসেন মোদী। এটিই তাঁদের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। বৈঠকের আগে মোদীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী টুইটারে জানান, ভারত-ইটালি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ২০২০-২৫ সালের অ্যাকশন প্ল্যান পর্যালোচনা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, জলবায়ু সংরক্ষণের স্বার্থে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার নিয়েও তাঁদের কথা হয়। এই সফরে ভ্যাটিকান সিটিতে গিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে মোদীর।
কার্বনমুক্ত জ্বালানির বদলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের কথা আগেও বলেছে ভারত। সরকারি সূত্রের মতে, গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে ফের এই বিষয়টিতে জোর দিতে পারেন মোদী। ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জ়িরো’ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর কথা জানিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অর্থাৎ ওই সময়ে তারা যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করবে, তার পুরোটাই প্রাকৃতিক বা প্রাযুক্তিক উপায়ে শুষে নেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারত এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে নারাজ। পরিবেশ সচিব আর পি গুপ্ত এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, শূন্যে পৌঁছনোর আগে কোন দেশ কতটা পরিমাণ কার্বন পরিবেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রটির মতে, উন্নত দেশগুলির লক্ষ্য হওয়া উচিত, এ ক্ষেত্রে শূন্যেরও নীচে নামা। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উপরে সামাজিক, অর্থনৈতিক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রভাব কী রকম হতে পারে, ভারত সেই বিষয়টিতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
জলবায়ু রক্ষায় দায়বদ্ধ ভারতের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা মোদী ওই সম্মেলনে বলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করা হতে পারে। জলবায়ুর নজরদারিতে ভারতের নিজস্ব ব্যবস্থা (‘ট্র্যাকার’) নিয়েও ঘোষণা হতে পারে ওই সম্মেলনে। সৌরশক্তি নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে ইতিমধ্যেই জোট বেঁধেছে ভারত। জলবায়ুর পরিবর্তন রুখতে এই ধরনের আন্তর্জাতিক জোটের প্রয়োজনীয়তার কথাও ওই সম্মেলনে বলতে পারে নয়াদিল্লি। সংবাদ সংস্থা