নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
আর দু’-পাঁচ বছর নয়। ১৫ বছর পরে, অর্থাৎ ২০৩৫-এ ভারত কোথায় পৌঁছবে, এ বারে তার লক্ষ্য বাঁধতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী।
মিশন ২০৩৫।
মোদী ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগেই ২০২২-এ ‘নতুন ভারত’-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৭৫-তম বছর বা ২০২২-এ দেশ দারিদ্র, দুর্নীতি, আবর্জনা, সন্ত্রাসবাদ, জাতপাত ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ভারতের কথা বলেছিলেন। কী ভাবে একই সঙ্গে এত কিছু মুক্ত ভারত তৈরি হবে, তার রূপরেখাও তৈরি হয়ে গেছে বলে দাবি সরকারের। এ বার ২০৩৫-এ ভারত কোথায় পৌঁছবে, তার লক্ষ্য স্থির করে রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
সরকারি সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে নীতি আয়োগ ২০৩৫-এর দিকে তাকিয়ে রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমার এ নিয়ে বৈঠক শুরু করেছেন। যা শুনে বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী কি নিশ্চিত যে ২০৩৫ পর্যন্ত তাঁর দলই ক্ষমতায় থাকবে? না কি তিনি এখনকার রুটিরুজি, চাকরির অভাব, অর্থনীতির সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন? ২০৩৫-এর আগে আরও তিন বার লোকসভা ভোট হবে— মনে করাচ্ছেন তাঁরা।
মোদীর দাবি, ২০২৫-এর ভারতের জিডিপি ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া হবে। সরকারের অনেক মন্ত্রী ২০৩০-এ ১০ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্নও দেখিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ২০৩০-এ আমেরিকা এবং চিনের পরেই ভারত হবে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। তা হলে ২০৩৫-এ ভারত কোথায় পৌঁছবে?
নীতি আয়োগের কর্তারা অবশ্য ১৫ বছরের রূপরেখা তৈরির মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না। তাঁদের যুক্তি, যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ তৈরির সময়ই ঠিক হয়েছিল, ১৫ বছরের ‘ভিশন’, ৭ বছরের ‘স্ট্র্যাটেজি’ ও ৩ বছরের ‘অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা’ তৈরি করা হবে। আয়োগের প্রথম উপাধ্যক্ষ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ পানাগড়িয়া ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০, এই তিন বছরের ‘অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা’ তৈরি করেছিলেন।
সূত্রের খবর, পানাগড়িয়ার পরে উপাধ্যক্ষের পদে রাজীব কুমার বসেই পানাগাড়িয়ার নথি হিমঘরে পাঠিয়ে মোদীর সুরে সুর মিলিয়ে ২০২২-এ নতুন কর্মসূচি তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ‘ইন্ডিয়া@৭৫’ নামের সেই নথি প্রকাশিত হয়েছে। এ বার রাজীব কুমার ১৫ বছরের ‘ভিশন’ তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। যার সূচনা ২০২০-২১ থেকে। আয়োগ কর্তাদের দাবি, ওই বছর থেকে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন কার্যকর হবে বলেই একে সূচনা-বর্ষ ধরা হচ্ছে।
সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘এই কল্পনাবিলাস আসলে মানুষের এখনকার রুটিরুজি, কাজের অভাবের সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল। সরকার নিজের দায়বদ্ধতা ছেড়ে কল্পনাবিলাসে ব্যস্ত।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘ওরা নজর ঘোরানোর চেষ্টা করুক। আমরা চাষিদের সমস্যা, বেকারি, শিল্পের করুণ দশার মতো সমস্যা নিয়েই সরব থেকে পথে নামব।’’