narendra Modi

প্রশ্নে মোদীর ভারতীয় নীতি

দিল্লির কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে জাস্টিন ট্রুডোর মন্তব্যের পরে গত তিন দিনে বিদেশ মন্ত্রক তিন দফায় তার বিরোধিতা করেছে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০৫
Share:

ফাইল চিত্র।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে বারবার ভারতের কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে সরব হচ্ছেন, তা একান্তই তাঁর ‘রাজনৈতিক’ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এ ভাবে ‘রাজনীতি করার অধিকার’ কানাডা এবং কানাডার মতো অনেক রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সক্রিয় অনাবাসী নীতিই। ভারত-কানাডা চলতি বিতর্ক সামনে চলে আসার পরে এমনটাই দাবি করছে কূটনৈতিক শিবির। শুধু কানাডা নয়, ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে এ দিন মুখ খুলে তাকে সমর্থন জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ব্রিটেনের বেশ কয়েক জন সাংসদও এ নিয়ে সরব।

Advertisement

দিল্লির কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে জাস্টিন ট্রুডোর মন্তব্যের পরে গত তিন দিনে বিদেশ মন্ত্রক তিন দফায় তার বিরোধিতা করেছে। প্রথমে সাউথ ব্লক বিবৃতি দেয়। তার পর বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সাংবাদিক সম্মেলন করে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর ভারতের রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলানোর সমালোচনা করেন। গত কাল নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনারকে সাউথ ব্লকে ডেকে প্রতিবাদপত্রও দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরেও ভবি ভোলেনি! গতকাল ভারতীয় সময় রাত এগারোটায় ভারতে আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়ে ফের সরব হয়েছেন ট্রুডো। ভারতের দেওয়া প্রতিবাদপত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকারের পক্ষে সব সময়ই রয়েছে কানাডা। আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর পক্ষপাতী আমরা।’

কানাডার পাশাপাশি ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে সরব হয়েছেন ব্রিটেনের বিভিন্ন দলের ৩৬ জন সাংসদ। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। পঞ্জাবের সঙ্গে জন্মসূত্রে যোগাযোগও রয়েছে অনেকের। তাঁরা সে দেশের বিদেশসচিব ডমিনিক রাবকে লেখা চিঠিতে অনুরোধ করেছেন, মোদী সরকারের কাছে বিষয়টিকে তুলতে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তা বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে মানুষের। কর্তৃপক্ষের উচিত তাতে বাধা না দেওয়া।’

Advertisement

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মোদী সরকার গত ছ’বছরে যে ভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে অনাবাসী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বিদেশনীতির অঙ্গ করে নেওয়ার নীতি নিয়ে চলছে, তা পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। হিসেব কষার প্রয়োজন রয়েছে যে, তাতে রাজনৈতিক দলের পুঁজিবৃদ্ধি হলেও আদতে জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ হচ্ছে কিনা। মোদী সরকার বহু রাষ্ট্র, বিশেষ করে পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার লক্ষ্যে সে সব রাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে এসেছে। অতীতে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, তাতে কাজও হয়েছে। ইউপিএ জমানায় ভারত-আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তি রূপায়ন করার প্রশ্নে সে দেশের রাজনৈতিক মতামত তৈরিতে কাজে এসেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা।

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, কানাডা, আমেরিকা বা ব্রিটেনের মতো দেশগুলি তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ক্রমশ শক্তিশালী হওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত সম্প্রদায়কে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতিতে তাঁদের নিযুক্ত করার তুলনায় নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার ও প্রসারেই তাদের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে উৎসাহী থেকেছে। ভারতের কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে নিজ দেশের শিখ সম্প্রদায়ের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে কানাডা বা ব্রিটেনের বিভিন্ন নেতার কাছে। গত বছর আমেরিকায় ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প হাজির হয়েছিলেন সে কারণেই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ২০১৫ সালে মোদীর কানাডা সফরের সময় সেখানকার অনাবাসী ভারতীয়দের (যাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিখ সম্প্রদায়ের) গুরুত্বকে প্রাধান্য দেন তাঁর কানাডা নীতিতে। সে সময় ট্রুডোর পূর্বসূরি স্টিফেন হার্পার মোদীকে নিয়ে সেখানকার গুরুদ্বারেও গিয়েছিলেন। সে সময় অল্প দিনের ব্যবধানে কানাডায় ভোট ছিল। হার্পারের উদ্দেশ্য ছিল, ভারতীয় বংশোদ্ভূত সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা চিত্রটি তুলে ধরে ভোটবাক্সে সাফল্য পাওয়া।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নেতারা কিন্তু দিনের শেষে আমেরিকা, কানাডা বা ব্রিটেনের নাগরিক। তাঁরা যদি ভারতীয় নেতৃত্বের থেকে অতিরিক্ত গুরুত্ব পান,, তবে তাকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিসাধনের তুলনায় নিজের বসবাসকারী দেশে নিজেদের রাজনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রেই বেশি উৎসাহী হবেন। মোদীর ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের নিযে কূটনৈতিক উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে, রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে সংশ্লিষ্ট দেশ এবং তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক — এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

পাশাপাশি আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের মুখপাত্র ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়ে বলেছেন, “অন্যত্র যা বলে থাকি, ভারতের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা খাটে। মানুষের অধিকার রয়েছে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানানোর। সরকারের উচিত তাদের সেটা করতে দেওয়া।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement