মোদীর ‘মন কি’- উদ্বেগ ছাত্রযুবরাই!

এনআরসি আর নাগরিকত্ব আইন ঘিরে বিক্ষোভ চলছে গোটা দেশেই। তার প্রথম সারিতে রয়েছে ছাত্র সমাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২০
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।

বছর শেষেও ভাবাচ্ছেন ছাত্র-যুবরাই। আজ এ বছরের শেষ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা যুবসমাজের উদ্দেশেই। নরেন্দ্র মোদী বললেন, যুবসমাজ নৈরাজ্য আর অস্থিরতা পছন্দ করে না! আবার নরেন্দ্র মোদীই বললেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রশ্ন করার সাহস যুবসমাজের বড় গুণ!

Advertisement

এনআরসি আর নাগরিকত্ব আইন ঘিরে বিক্ষোভ চলছে গোটা দেশেই। তার প্রথম সারিতে রয়েছে ছাত্র সমাজ। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া থেকে আইআইটি মাদ্রাজ। উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়— সর্বত্র পথে নেমেছেন পড়ুয়ারা। এই আবহে মোদীর আজকের বক্তব্য পরোক্ষে ছাত্রদের উদ্দেশে শান্ত থাকার আহ্বান বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। সেই সঙ্গে যুবসমাজের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম বিভাজন টানার ইঙ্গিতও খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মতে, মোদী এ দিন আসলে বলতে চাইলেন, ‘আদর্শ’ যুবসমাজ ‘নৈরাজ্য আর অস্থিরতা’ পছন্দ করে না। অর্থাৎ যে যুবসমাজ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে, তারা সঠিক পথে চলছে না। আবার অন্য দিকে, রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করার প্রসঙ্গ তুলে আপাত নমনীয়তার বার্তাও দিয়ে রাখলেন। খানিকটা দু’কুল রাখার চেষ্টা করে একটা ভারসাম্যের পথ খুঁজতে চাইলেন।

বস্তুত ২৫ তারিখ অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে লখনউ গিয়ে মোদী আরও কড়া ভাষায় কথা বলেছিলেন। ‘আজাদি-প্রেমী’ যুবসমাজকে তার ‘কর্তব্য’ মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ‘মিথ্যা গুজবে কান দিয়ে হিংসা ছড়ানো আর সরকারি সম্পত্তি নষ্টে’র তীব্র নিন্দা করেছিলেন। ছাত্রদের উপরে পুলিশি হামলার ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি। লখনউয়ে তিনি ছিলেন কড়া প্রশাসকের মেজাজে। আজ বছরের শেষ রবিবারে কিন্তু সেই তুলনায় অনেকটাই নরম মোদীর গলা। তা দেখে রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, ছাত্রসমাজকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনের উদ্বেগই প্রকাশ পেয়েছে‌ আজ। শুধু কড়া কথায় হিতে বিপরীত হতে পারে, এই আশঙ্কাও হয়তো কাজ করেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: মেরঠের এসপিকে কড়া বার্তা নকভির

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মোদী সরকার যেনতেন ভাবে প্রতিবাদের যে কোনও স্বরকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু তাতে যুব সমাজকে থামানো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে মোদী আজ যুবসমাজের প্রশ্ন করার অভ্যাসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের ক্ষেত্রে ভাল ব্যাপার হল যুব সমাজ যে কোনও নিয়মকে মেনে চলে। কিন্তু যখন রাষ্ট্রযন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তখন যুবসমাজের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। সাহস করে সেই রাষ্ট্রযন্ত্রকেই প্রশ্ন করে বসেন এঁরা। যা একটি গুণ।’’ তা হলে কি নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ সামাল দেওয়ার কাজে ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা’ পরোক্ষে স্বীকারই করে নিলেন মোদী? চর্চা তুঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে, দেশব্যাপী বিরোধিতার আওয়াজ, যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ আর পাঁচ রাজ্যে পরাজয় সুরই কি নরম হতে বাধ্য করল প্রধানমন্ত্রীকে?

আরও পড়ুন: এনআরসিতে এনপিআর তথ্য! গুলিয়ে দিলেন রবিশঙ্করও

বিজেপি অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। দলের ব্যাখ্যা, পরিস্থিতি বুঝে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। লখনউয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল অটল-স্মরণে। ‘সুশাসন দিবস’-এ প্রশাসক হিসাবে কড়া বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল সংঘর্ষ দীর্ণ উত্তরপ্রদেশে। এ দিনের পরিস্থিতি ভিন্ন। সময় ও প্রেক্ষিতও আলাদা। তাই নতুন প্রজন্মকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিতে কসুর করেননি মোদী। বলেছেন, ‘‘এই প্রজন্ম ভীষণ প্রতিভাধর। এঁদের নিজস্ব মতামত যেমন রয়েছে, তেমনই এঁরা নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। যুব সমাজ অনিশ্চিত সরকারকে পছন্দ করে না। তেমনই স্বজনপোষণ, জাতপাত, পক্ষপাতিত্ব কিংবা লিঙ্গবৈষম্যও এঁদের অপছন্দ।’’

যদিও মোদীর মুখে উল্টো সুর শুনে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেড়ার বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছাত্র সমাজের কাছে আগে ক্ষমা চাওয়া। সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেই এই ছাত্র-যুবদের অপরাধী বলে চিহ্নিত করে ফেলা হয়। আর এখন প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রশংসা করছেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement