ছবি পিটিআই।
কৃষক আন্দোলনের পিছনে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে অনড় রইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মঙ্গলবার তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, “দিল্লির আশেপাশে কৃষকদের বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমি কৃষক ভাই-বোনদের বলছি, তাঁদের যে কোনও আশঙ্কা দূর করতে সরকার ২৪ ঘণ্টা তৈরি।”
নতুন নয়। প্রধানমন্ত্রী এর আগেও কৃষকদের আন্দোলনের পিছনে বিরোধী শিবিরের উস্কানির অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর মন্ত্রী বা বিজেপি নেতারা খলিস্তানি, পাকিস্তান, চিন, টুকরে টুকরে গ্যাং, অতি-বাম, মাওবাদীর মতো শক্তির হাত রয়েছে বলে এক-এক বার এক-একরকম দাবি করেছেন। সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করে প্রধানমন্ত্রী আবার বিরোধী শিবিরের দিকেই কৃষকদের ভুল পথে চালিত করার অভিযোগ তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার ঘণ্টাচারেকের মধ্যেই দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় সিংঘুতে বিক্ষোভকারী কৃষক নেতারা তাঁর দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। কৃষক মোর্চার নেতাদের সাফ কথা, প্রধানমন্ত্রী শুধু বলছেন, আমাদের ভুল পথে চালিত করা হয়েছে। এ ভাবে কি সমস্যার সমাধান হয়? প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’ বলছেন। কিন্তু চাষিদের কথা শোনার সময় তাঁর নেই। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী বণিকসভা ফিকি-র বার্ষিক সভায় গিয়ে শিল্পমহলকে কৃষিতে লগ্নির আহ্বান জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে কটাক্ষ করে এক কৃষক নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলছেন, চাষিদের স্বার্থে আইন এসেছে। আবার ফিকি-র সভায় বলছেন, শিল্পপতিদের লগ্নির জন্য কৃষি ক্ষেত্র খুলে দেওয়া হয়েছে।”
টানা ২০ দিন ধরে দিল্লিতে ঢোকার একাধিক সড়ক অবরুদ্ধ থাকার পরে এ বার শিল্পমহলও মোদী সরকারের উপরে অবরোধ তোলার জন্য চাপ তৈরি করছে। সোমবারই বণিকসভা সিআইআই-এর কর্তারা বলেছিলেন, সড়ক অবরোধের ফলে পণ্য পরিবহণের খরচ ৮-১০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। আর এক বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম-এর সভাপতি নিরঞ্জন হিরনন্দানির বক্তব্য, প্রতিদিন অর্থনীতিতে তিন-সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। নর্দার্ন রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার আশুতোষ গঙ্গল জানান, কৃষকদের অবরোধের ফলে রেলের ২০০০-২৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
কৃষক নেতারা এ দিন জানান, আইন প্রত্যাহার না হলে তাঁরা এক ইঞ্চি পিছু হঠবেন না। সরকার চাইলে বলপ্রয়োগ করতে পারে। এক কৃষক নেতা বলেন, “এ দেশে এমন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যাঁরা নিজেরা হেঁটে কৃষকদের কাছে পৌঁছেছিলেন। আমরা ভুল প্রধানমন্ত্রী বেছেছি। উনি সেবক, ঈশ্বর নন।” প্রধানমন্ত্রী এ দিন গুজরাতের কৃষক, পশুপালকদের সামনে বলেন, “কৃষকদের ভয় দেখানো হচ্ছে, সংস্কারের ফলে জমি অন্যরা দখল করে নেবে। আপনারাই বলুন, কেউ আপনাদের থেকে দুধ কেনার চুক্তি করলে কি গরু-মোষ নিয়ে চলে যায়? পশুপালকরা যেখানে খুশি দুধ বেচতে পারেন। আনাজ, ডাল চাষ করা ছোট কৃষকদের একই স্বাধীনতা কেন থাকবে না? এই কৃষি সংস্কারের দাবি অনেক বছরের।” তা শুনে কৃষক নেতাদের জবাব, “আইন তো আমাদের জন্য। আমরা খারিজ করছি।”
মোদী আজ কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেছেন, “এখন যাঁরা বিরোধী আসনে বসে কৃষকদের বিভ্রান্ত করছেন, তাঁরাই নিজেদের সময়ে এই সব সংস্কারের সমর্থন করেছিলেন।” কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেন, “মোদী সরকারের কাছে আন্দোলনকারী ছাত্রেরা দেশদ্রোহী, উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা শহুরে নকশাল, পরিযায়ী শ্রমিকেরা কোভিড বহনকারী, ধর্ষণে নির্যাতিতারা কেউ নন। আন্দোলনকারী চাষিরা খলিস্তানি। প্রিয় বন্ধু হল মুনাফাখোর শিল্পপতিরা।” শিরোমণি অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিংহ বাদলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিজেপি-ই প্রকৃত টুকরে টুকরে গ্যাং। তারা হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ঘটিয়েছে, এখন পঞ্জাবি শিখ এবং পঞ্জাবি হিন্দুভাইদের মধ্যে বিভেদ ঘটাতে চাইছে।’’
এ দিকে, প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের আশঙ্কা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিলেও নতুন করে সরকার কৃষকদের কাছে আলোচনার প্রস্তাব পাঠায়নি। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর আজ ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (কিসান) নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই সংগঠনটি আন্দোলনে নেই। কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লার অভিযোগ, সরকার কৃষকদের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকরা একসঙ্গে আন্দোলন করছেন বলে তাঁদের মধ্যে ফাটল ধরাতে শতদ্রু-যমুনা সংযোগকারী খালের বিতর্কিত প্রসঙ্গও ফের তুলে আনা হচ্ছে।