Narendra Modi

পরিকাঠামোয় লগ্নি, কিন্তু টাকা দেবে কে?

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য নিশ্চিত যে, মজবুত পরিকাঠামোর ভিতে ভর করেই দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২০ ০৪:১১
Share:

নরেন্দ্র মোদী।

সঙ্কটের খাদ থেকে অর্থনীতিকে টেনে তুলতে পরিকাঠামোয় লগ্নি করা ছাড়া যে গতি নেই, তা কার্যত স্বীকার করে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দাবি করলেন, ওই খাতে ১১০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য প্রায় ৬০ হাজার প্রকল্পকে চিহ্নিত করার কাজ সারা। কিন্তু ওই বিপুল বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে, তা স্পষ্ট হল না তাঁর বক্তব্যে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য নিশ্চিত যে, মজবুত পরিকাঠামোর ভিতে ভর করেই দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতি। যা, অন্যতম স্তম্ভ হবে আত্মনির্ভর ভারতের। এই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার ডাককেই আজ তিনি বক্তৃতার মূল সুর হিসেবে বেঁধেছিলেন।

লালকেল্লার প্রাচীর থেকে ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের বক্তৃতায় মোদীর দাবি, করোনার প্রকোপ থেকে অর্থনীতিকে বার করে আনতে জাতীয় পরিকাঠামো পরিকল্পনায় জোর দেওয়া হবে। এ জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার প্রকল্প। সেখানে প্রয়োজনীয় লগ্নির অঙ্ক ১১০ লক্ষ কোটি টাকা। এতে নতুন গতি আসবে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে।

Advertisement

আরও পড়ুন: চিনে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রদূত সরব আগ্রাসন নিয়ে

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “সব সময়ই বলা হয়, এমন সঙ্কট মুহূর্তে অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে পরিকাঠামোয় টাকা ঢালা জরুরি। তাতে তৈরি হয় কাজের সুযোগ। ছোট-মাঝারি সংস্থা, মধ্যবিত্ত, কৃষক থেকে শুরু করে তার সুফল ঘরে তুলতে পারেন অনেকে।”

বিরোধীদের বক্তব্য, পরিকাঠামো খাতে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা নতুন নয়। কিন্তু, এই টাকা আসবে কোথা থেকে? অতিমারির এই অনিশ্চিত সময়ে চট করে নতুন বড় লগ্নির পথে হাঁটতে রাজি খুব কম বেসরকারি সংস্থাই। তা হলে কি সরকার বিনিয়োগ করবে?

সরকারি ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া অর্থনীতির হাল ফেরানো যে এই মুহূর্তে কার্যত অসম্ভব, সে কথা সম্প্রতি বার বার বলেছেন দেশ-বিদেশের প্রথম সারির বহু অর্থনীতিবিদ। যে কারণে রাজকোষ থেকে মোটা ব্যয়ের পরিবর্তে ঋণের সুবিধায় ঠাসা ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প খুশি করতে পারেনি তাঁদের। এখন বিরোধীদের প্রশ্ন, খোদ প্রধানমন্ত্রী পরিকাঠামোয় বিনিয়োগে জোর দেওয়ার পরে ওই খাতে কি হাত উপুড় করবে সরকার?

পরিকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে তৈরি সোনালি চতুর্ভুজের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মোদী। কিন্তু একই সঙ্গে দাবি করেছেন, সময় আমূল বদলে যাওয়ায় এখন বন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তা, রেলস্টেশন ইত্যাদিকে আলাদা-আলাদা ভাবে দেখার দিন শেষ। বরং তাদের সকলকে এক পরিকল্পনা-নকশায় এনে সার্বিক উন্নয়ন জরুরি। যাকে ‘মাল্টি মডেল কানেক্টিভিটি’র তকমা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দাবি করেছেন,

বন্দর-ভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের বিস্তীর্ণ সমুদ্রতটের ‘গা ঘেঁষে’ চার লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে। সামরিক প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে চওড়া রাস্তা দিয়ে জোড়া হবে দেশের উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমকে। কিন্তু এই ‘রাজসূয় যজ্ঞের’ খরচের কতখানি সরকার জোগাবে, সেই ধোঁয়াশা রয়েই গেল বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

লকডাউনের সময়ে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় আত্মনির্ভর ভারত গড়ার স্বপ্ন তুলে ধরার পর থেকেই তাকে পাখির চোখ করেছেন মোদী। এ দিনও দাবি করেছেন, আত্মনির্ভর ভারত গড়া আর শুধু ১৩০ কোটি দেশবাসীর ‘স্বপ্ন’ নয়। বরং তাকে নিজেদের জীবনে ‘সঙ্কল্প’ আর ‘মন্ত্র’ করে নিয়েছেন তাঁরা। এ দিন প্রধানমন্ত্রী কখনও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়ার ডাক দিয়েছেন, কখনও মনে করিয়েছেন স্থানীয় পণ্যের জন্য গলা ফাটানোর প্রয়োজনীয়তা (ভোকাল ফর লোকাল)। কৃষি, পরিকাঠামো, আর্থিক ক্ষেত্রে ঝোড়ো সংস্কার থেকে নতুন শিক্ষা নীতি— সব কিছুই ওই স্বাবলম্বনকে লক্ষ্য রেখেই করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, এক সময় এই ভাবেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়ার’ প্রচারে নেমেছিল সরকার। তারও মোদ্দা বক্তব্য ছিল, দেশের মাটিতে সারা বিশ্বের জন্য পণ্য তৈরি। উৎপাদন শিল্পে দুনিয়ার হাব হয়ে ওঠা। কিন্তু সেই প্রকল্প সাফল্যের মুখ না-দেখায় এখন তাকেই আত্মনির্ভর ভারতের নতুন মোড়কে পেশ করছেন মোদী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement