Narendra Modi

ছিল পঞ্জাব, হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ! চাষি-বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় বাংলা

কৃষকেরা ‘পিএম-কিসান’-এর টাকা পাচ্ছে না জেনেও বামেরা তা নিয়ে কেন বাংলায় আন্দোলন করছেন না?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:১৬
Share:

ছবি পিটিআই।

ছিল পঞ্জাব, হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ!

Advertisement

কথা ছিল, পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের দিল্লি ঘেরাওয়ের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন রাজ্যের চাষিদের সঙ্গে কথা বলবেন। তিন কৃষি আইন নিয়ে তাঁদের মতামত জানবেন। কিন্তু রাজনীতির ‘হযবরল’-য় মোদী আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আক্রমণ করে অভিযোগ তুললেন, ‘রাজনৈতিক কারণে’ রাজ্যের ৭০ লক্ষ কৃষকের ‘পিএম-কিসান’ প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। বাংলার ২৩ লক্ষ কৃষক অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাঁদের টাকাও মমতার সরকার আটকে রেখেছে।

বাম ও কংগ্রেসকেও এ দিন রেয়াত করেননি মোদী। প্রশ্ন তুলেছেন, কৃষকেরা ‘পিএম-কিসান’-এর টাকা পাচ্ছে না জেনেও বামেরা তা নিয়ে কেন বাংলায় আন্দোলন করছেন না? বলেছেন, বাংলায় কৃষকদের পাশে না-দাঁড়িয়ে বামেরা পঞ্জাবে পৌঁছে গিয়েছেন! বাংলায় বামেরা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করলেও, দিল্লি অবরোধের আন্দোলনে তৃণমূল এসে বামেদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বলে কটাক্ষ করেছেন। কংগ্রেসও বাংলার চাষিদের হয়ে মুখ খুলছে না বলে নালিশ করেছেন। প্রশ্নের সুরে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “দেশের মানুষ কি এই খেলা জানে না?”

Advertisement

কৃষি মন্ত্রকের সরকারি মঞ্চের অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী বাংলার ভোটের ময়দানে বিজেপির তিন প্রতিদ্বন্দ্বীকে একই সঙ্গে নিশানা করেছেন দেখে রাজনীতিকরা বলছেন, মোদীর পাখির চোখ যে এখন পশ্চিমবঙ্গ, তা ফের স্পষ্ট। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সরকারি মঞ্চকে রাজনৈতিক আক্রমণে কাজে লাগাতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আরও পড়ুন: দেশের স্থপতিদের আদর্শ মেনেই চলছি, মোদীকে জবাব মমতার

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদাপূর্ণ অফিসটিকে নরেন্দ্র মোদী আজ বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন।” তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তৃণমূল-সিপিএমের সমালোচনা করছেন। এটা কি কোনও প্রধানমন্ত্রীকে শোভা পায়?” বিজেপি নেতাদের পাল্টা যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছাড়া, তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস কারও নাম করেননি।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘পিএম-কিসান’ প্রকল্প চালু না-করায় বহু দিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার কেন্দ্রকে চিঠি লিখে বলেছেন, সরাসরি চাষিদের দেওয়ার বদলে ওই টাকা রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়া হোক। রাজ্য তা বিলি করবে। কিন্তু কেন্দ্র তা মানতে চায়নি। সূত্রের খবর, গত কাল মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ফের ওই প্রস্তাব খারিজ করেছেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৯ কোটি চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘পিএম-কিসান’-এর এক কিস্তির ২ হাজার টাকা আনুষ্ঠানিক ভাবে জমা করার আগে তোমর ফের পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঙুল তোলেন। তবে তাঁর সুর ছিল নরম।

আরও পড়ুন: ‘জহরদা কি বাড়ি আছেন!’ প্রয়াত অভিনেতার বাড়ি কার্ড নিয়ে হাজির বিজেপিকর্মীরা

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একেবারে ঝাঁঝালো সুরে বলেন, “বাংলার সরকার রাজনৈতিক কারণে এটা (পিএম কিসান প্রকল্প) আটকে রেখেছে।” কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে দিল্লি সীমানায় সিংঘুতে ডেরেককে পাঠিয়েছিলেন মমতা। সে দিকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, “নিজের রাজ্যে ৭০ লক্ষ চাষির টাকা আটকে রাখেন। কিন্তু বাংলায় যাদের সঙ্গে লড়াই, দিল্লিতে এসে তাদের সঙ্গে গোপন আঁতাঁত করেন।” পাশাপাশি, বামেদের নাম না-করে বলেন, “এরা বাংলায় ৩০ বছর এমন এক রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে রাজত্ব করেছে যে, বাংলাকে কোথা থেকে কোথায় এনে কী হাল করে রেখেছে। এমনকি মমতাজির ১৫ বছরের পুরনো বক্তৃতা শুনলেও জানা যায়, এই মতাদর্শ বাংলার কতটা ক্ষতি বরবাদ করেছে।’’

মোদীর অভিযোগ উড়িয়ে সৌগতের বক্তব্য, “রাজ্যের কৃষক-বন্ধু প্রকল্পে ৪৭ লক্ষ চাষি উপকৃত। বাংলায় কৃষকদের আয় অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেকখানি বেড়েছে।” আর ডেরেকের প্রশ্ন, ‘‘উনি যে ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কী হল?”

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতী কখনও জমি নিয়ে কোনও বেনিয়মের কথা জানায়নি: অমর্ত্য

‘পিএম কিসান’ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মোদী। এ দিন যন্তরমন্তরে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পঞ্জাবের কংগ্রেসের সাংসদদের ধর্নায় যোগ দিয়ে দলের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কৃষক-বন্ধু প্রকল্প রয়েছে। ওড়িশা-তেলঙ্গানাতেও রয়েছে। পিএম-কিসান নতুন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী চাষিদের ঋণ মকুব করছেন না কেন?”

বাম-কংগ্রেস দিল্লিতে মান্ডি, এপিএমসি-র পক্ষে সওয়াল করলেও, কেরলে এ বিষয়ে চুপ কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সিপিএমের কৃষক সভার নেতা পি কৃষ্ণপ্রসাদের জবাব, “কেরলে ৮২ শতাংশই অর্থকরী ফসল। কেরলের বাম সরকার ধানে কুইন্টাল প্রতি ২৮৭০ টাকা এমএসপি দেয়। মোদী সরকার মাত্র ১৮৭০ টাকা ঘোষণা করে। কিন্তু চাষিরা ৯০০-১১০০ টাকা পায়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement