ফাইল ছবি
জেলগুলি যাতে ‘দেশবিরোধী কাজের’ আখড়া না হয়ে ওঠে, সে জন্য সমস্ত রাজ্যকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, জেলগুলির সংস্কার ও দেশের কারাব্যবস্থার মধ্যে সমতা আনার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে আদর্শ জেলবিধি আনা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্য তা না মানায় সোমবার চিঠি দিয়ে রাজ্যগুলিকে নিজেদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে কয়েদিদের মানসিক সংশোধনের উপরে। যাতে জেলে বসে নতুন কোনও অপরাধ, দেশবিরোধী তথা জেহাদি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত না হয় সাধারণ অপরাধীরা। সেই কারণে প্রতিটি জেলে প্রথম বার অপরাধ করে আসা ব্যক্তি এবং দাগি আসামিদের আলাদা করে রাখার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথম বারের সাজাপ্রাপ্তরা যাতে দাগি আসামিদের খপ্পরে না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
একই ভাবে জেলের গ্রন্থাগারে কী বই রাখা হচ্ছে, সেই বই দেশবিরোধী কাজ করতে উস্কানি দিচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধীদের মানসিক চাপ কমাতে ও জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ছবি গড়ে তুলতে নিয়মিত ভাবে মনোবিদদের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। মনোবিদ থেকে আইনজীবী জোগাড় করে দেওয়া, কয়েদিদের সুস্থ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করে। ওই সংগঠনগুলি কী ধরনের কাজ করছে, কোথা থেকে অর্থ সাহায্য পাচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে জেল প্রশাসনকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, অধিকাংশ জেলেই কারাকর্মী ও কয়েদিদের মধ্যে অনৈতিক আঁতাঁত থাকে। ফলে কারাকর্মীদের ঘুষ দিয়ে বাইরে থেকে অনেক কিছুই আনিয়ে নেয় অনেক কয়েদি। ওই দুষ্ট চক্র ভাঙতে কারাকর্মীদের অন্তত প্রতি দু’বছর অন্য জেলে বদলির সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। একই সঙ্গে সংশোধনাগারগুলির সার্বিক উন্নয়ন, সেগুলির সুরক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণে, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শ, জেলের ভিতরেই উন্নত ও আধুনিক মানের হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। যাতে চিকিৎসার জন্য বন্দিদের জেল হাসপাতালের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজনই না হয়। কারারক্ষীদেরও বিনা কারণে জেল চত্বরের বাইরে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ রয়েছে চিঠিতে।
দেশের প্রায় সব রাজ্যেই জেলে বসে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখে দাগী অপরাধীরা। মূলত কারাকর্মীদের যোগসাজশেই জেলের ভিতরেই মোবাইল পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ। যা রুখতে প্রতিটি জেল চত্বরে অত্যাধুনিক জ্যামিং প্রযুক্তি বসানোর পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। যাতে অপরাধীদের হাতে মোবাইল থাকলেও তারা তা ব্যবহার করতে না পারে।
চিঠিতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে সাজাপ্রাপ্তদের পুনর্বাসনের উপরে। দেখা গিয়েছে অধিকাংশ সাজাপ্রাপ্তই সাজা কাটানোর পরে কাজের অভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পেরে ফের অন্ধকারের রাস্তা বেছে নেয়। তাই জেলে থাকার সময়ে বিভিন্ন উপার্জনমুখী হাতের কাজ শেখানোয় জোর দিয়েছে কেন্দ্র।