নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
তিনি মঞ্চে উঠবেন। হাততালির ঝড় উঠবে। তিনি বলবেন। হাততালির রেশ থামতেই চাইবেন না। এমনই যেন নিয়ম, এমনটাই যেন স্বাভাবিক।
আজ নিয়ম পাল্টে গেল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই হাততালি চাইলেন। তা-ও একবার নয়। দু’বার।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, মোদী জমানায় শিল্পপতিরা আতঙ্কে ভুগছেন। আজ যেন সেই আতঙ্ক কাটাতেই মোদী বলেছেন, কোম্পানি আইনে এমন অনেক বিধান ছিল, যেখানে ছোটখাটো অপরাধেও শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা
হওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মোদী বলেন, ‘‘এগুলো আপনাদের অসুবিধার কারণ ছিল।’’
কিন্তু তারপরেও বিশেষ হাততালি পড়েনি। অল্পস্বল্প হাততালি শুনে মোদী বলেন, এই তালিতে দম নেই। নড়েচড়ে বসে শিল্পপতিরা জোরে হাততালি দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথম বারে তালি কম পড়েছিল। কারণ, আপনাদের বিষয়টা জানা ছিল না। এ বার বেশি হাততালি পড়ল। কিন্তু আপনারা জানেন না, আমি কী বলছি। এই বিষয়টা কত গুরুত্বপূর্ণ।’’
এর পরে হাততালি পেতে তাঁর তুরুপের তাস বের করেছেন মোদী। কর্পোরেট কর কমানোর কথা মনে করিয়ে মোদী যুক্তি দেন, কর্পোরেট কর কোনও দিন এতটা কমেনি। ১০০ বছরের ইতিহাস সামনে রয়েছে। যাচাই করে নিন। তার পরেও বিশেষ হাততালি পড়েনি।
কেন হাততালি কম? প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন— ‘‘আপনাদের তালি কমে গিয়েছে। কারণ, আপনারা ভবিষ্যতে কী পাবেন, তা নিয়ে ভাবছেন। এখনও পর্যন্ত কী হয়েছে, তা বার বার মনে করিয়ে দিতে হয়েছে।’’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী তাঁদের যে ‘স্যুট-বুট কি সরকার’ আখ্যা দিয়েছিলেন, সে দিকে ইঙ্গিত করে মোদী মনে করান, আমাদের লোকে কর্পোরেট এজেন্টও বলেছে।
তবে শিল্পপতিদের মুখে যে হাসি নেই, তা আজ টের পেয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও। ফিকি-র অধিবেশনে গিয়ে পীযূষ বলেন, ‘‘মন্ত্রকের অফিসারদের পরিস্থিতি জানাতে বললে তাঁরা যে পরিসংখ্যান দেন, তাতে মনে হয়, ‘অল ইজ ওয়েল’। কিন্তু আপনাদের মুখ দেখে তা মনে হচ্ছে না।’’
শিল্পমহলের যুক্তি সাফ— কর্পোরেট কর কমালেও লগ্নি করে লাভ নেই। কারণ, বাজারে চাহিদা নেই। অর্থমন্ত্রী আজ নির্মলা সীতারামন শিল্পমহলকে বলেন, ‘‘আমি আবেদন করব, নিজেদের প্রতি এই সংশয় থেকে বেরিয়ে আসুন। আমরা কি পারব? ভারত কি পারবে? এত নেতিবাচক মানসিকতা কেন?’’ অর্থনীতির সমস্ত মাপকাঠি ঠিক রয়েছে বলে দাবি করে নির্মলার আর্জি, ‘‘আপনাদের মধ্যেই ‘অ্যানিম্যাল স্পিরিট’ রয়েছে। তা বের করে আনুন।’’
শিল্পমহলের মৃদু হাততালি বুঝিয়ে দিয়েছে, কথাই সার। ফলের আশা দূর অস্ত্।