Narendra Modi

লাদাখে অনড়ই চিন, মোদীর মন্তব্য কি পিছু হটার লক্ষণ

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পরে গত কালই অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, চিনা অনুপ্রবেশ না-হলে মে মাসের গোড়া থেকে কিসের ঝামেলা চলছে লাদাখে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২০ ০৪:৫৪
Share:

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

শুক্রবার সর্বদল বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য ঘিরে যখন দেশ জুড়ে বিতর্ক, তখন ক্ষতি সামাল দিতে আসরে নামল প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)। শনিবার দুপুরে এক বিবৃতিতে তাদের অভিযোগ, বৈঠকে লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন, তার ‘অভিসন্ধিমূলক ব্যাখ্যা’ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বৈঠকে মোদী দাবি করেছিলেন, “ওখানে আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে কেউ ঢোকেনি। ওখানে আমাদের এলাকায় কেউ ঢুকে বসেও নেই।”

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পরে গত কালই অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, চিনা অনুপ্রবেশ না-হলে মে মাসের গোড়া থেকে কিসের ঝামেলা চলছে লাদাখে? দু’দেশের মধ্যে পনেরোটির বেশি সেনা পর্যায়ের বৈঠকই বা কেন হল? আজ সকালে টুইট করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেন, ‘চিনের আগ্রাসনের মুখে প্রধানমন্ত্রী ভারতের জমি সমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন। যদি ওই জমি চিনেরই হয়, তা হলে আমাদের সেনারা কেন মারা গেলেন? আর কোথায়ই বা তাঁরা মারা গেলেন?’ সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমারের কটাক্ষ, ‘ঘরে ঢুকে মারব বলে ক্ষমতায় এসে (এখন) কুড়ি জন জওয়ানের মৃত্যুর পর বলছে ঘরে কেউ ঢোকেইনি। এ কেবল ফেকু নয় সঙ্গে ফাট্টু (ভীতু)।’

লাদাখ নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক ও সেনাবাহিনী যা বলছে, প্রধানমন্ত্রী তার সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলায় হতাশা প্রকাশ করেন প্রাক্তন কূটনীতিক এবং সেনাকর্তারাও। তাঁদের মতে, সরকার যা অবস্থান নিয়েছে, তাতে গালওয়ান উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চিনা অনুপ্রবেশ ও পরিকাঠামো নির্মাণ নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে দর কষাকষির সমস্ত রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেল।

Advertisement

এই অবস্থায় পিএমও-র দাবি, ‘চিনা বাহিনী অনেক বেশি সংখ্যায় নিয়ন্ত্রণরেখায় এসেছিল। ভারত যোগ্য জবাব দিয়েছে। গত ১৫ জুন চিনাবাহিনী গালওয়ানে নিয়ন্ত্রণরেখার ঠিক এ-পারে কাঠামো তৈরি করতে চাইছিল। তাদের বিরত করার চেষ্টা হলে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। আমাদের সেনাবাহিনীর সাহসিকতার কারণে সীমান্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের দিকে কোনও চিনা সেনা নেই। ১৬ বিহার রেজিমেন্টের সেনাদের আত্মবলিদানের ফলে সে দিন ভারতের জমিতে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ এবং পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা ব্যর্থ হয়।’ পিএমও-র বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘আমাদের সাহসী জওয়ানেরা যখন সীমান্ত রক্ষা করছেন, তখন তাঁদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে এই ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করা দুঃখজনক। আমাদের বিশ্বাস, এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার ভারতের জনগণের ঐক্য ভাঙতে পারবে না।’

পিএমও-র এই ব্যাখ্যা এবং পাল্টা আক্রমণ অবশ্য বিতর্কে ইতি টানতে পারেনি। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নটা শুধু রাজনৈতিক মহল থেকেই উঠছে না, উঠছে কূটনীতিক এবং সেনা মহল থেকেও। তাঁদের বক্তব্য, গত ৬০ বছরে ভারতের ৪৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ভিন্ দেশের হাতে চলে গিয়েছে, বারবার এই কথা বলে মোদী সরকার আসলে লাদাখে তাদের ব্যর্থতাকেই আড়াল করার চেষ্টা করছে। কূটনীতিক মহলের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য কি তা হলে পূর্ব লাদাখের কয়েকশো বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ডকে চিনের এলাকা বলে স্বীকার করে নেওয়া এবং ভারতের মানচিত্র বদলের পথে হাঁটা শুরু করার ইঙ্গিত?

আরও পড়ুন: গালওয়ান নিয়ে চিনা দাবি ওড়াল দিল্লি

প্রাক্তন বিদেশসচিব নিরুপমা রাওয়ের ব্যাখ্যা, ‘‘আমার মনে হয়, চিনের সঙ্গে শক্তির ফারাকের কথা ভেবে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য, সরকার বাধ্য হয়েই এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্গঠনের প্রশ্নে চিন আগের চেয়ে অনেক কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গালওয়ান-সহ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ফেরানোর প্রচেষ্টা শুরুর ক্ষেত্রে সেটিও বিবেচনায় এসেছে।’’ পাশাপাশি টুইটারে তাঁর মন্তব্য, ‘প্যাংগং হ্রদ এবং ডেপসামের ক্ষেত্রেও কি একই পথে হাঁটা হবে? সে ক্ষেত্রে কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে ভারতের এত দিনের অনড় অবস্থানের বদল ঘটতে দেখব আমরা।’

প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামেশ্বর রয়ের টুইট, ‘দেখে খারাপ লাগছে, লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পরিবতর্নের যে চেষ্টা চিন করছিল, ভারত নিশ্চুপে তা মেনে নিল।’ পিএমও-র বিবৃতিতে দাবি, ‘ভারতীয় ভূখণ্ড কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে, ভারতের মানচিত্রেই তা স্পষ্ট। বর্তমান সরকার তা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।’

কিন্তু কূটনৈতিক মহলের মতে, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের যে ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক, তা ভারতের অবস্থানকে দুর্বল করেছে। দু’দিন আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চিনের বিদেশমন্ত্রীকে বলেন, চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে ঢুকে কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর কথা মানলে ধরতে হবে সে অভিযোগ মিথ্যা ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement