ফাইল চিত্র।
এক দিকে মেরুকরণের রাজনীতি, অন্য দিকে যোগী শাসনে উত্তরপ্রদেশের ‘সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলার’ ছবি। উত্তরপ্রদেশে ভোটে জিততে দুই অস্ত্রে শান দিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। এ যাবৎ মেরুকরণ প্রশ্নে সরব থাকার পরে সমাজবাদী শাসন ও যোগী আদিত্যনাথের শাসনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলনা টেনে আজ এক যোগে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী যখন আজ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দ্বিতীয় ‘জন চৌপাল’ বা ভার্চুয়াল জনসভা করেছেন, তখন অমিত শাহকে পাশে নিয়ে আজ নিজের গোরক্ষপুর কেন্দ্রের মনোনয়ন জমা দেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী যোগী আদিত্যনাথ।
গত ক’দিন মেরুকরণের উদ্দেশ্যে প্রচারের সুর বাঁধলেও, আজ কেবল আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নেই অখিলেশ যাদব তথা এসপি-কে আক্রমণ শানান বিজেপি নেতৃত্ব। আজ মিরাট, নয়ডা, গাজ়িয়াবাদ, মথুরার কর্মী-সমর্থকদের নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা আগে বন্দুক-ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াত, তারা যোগী শাসনে শান্তিতে নেই। অতীতে এসপি সরকার দুষ্কৃতীদের সব ধরনের ছাড় দিয়েছিল। যে কারণে রাজ্যের বোন ও মেয়েরা সব থেকে সমস্যায় পড়েছিলেন। কিন্তু যোগী সরকার আসার পরে সেই দুর্বৃত্তদের ঘুম উড়ে গিয়েছে। তারা হয় আত্মসমপর্ণ করেছে বা গ্রেফতার হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রীর দাবি, যোগী আদিত্যনাথের সরকার মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ায় তারা সকলেই এখন প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাফিয়াদের সমর্থনে সরকার তৈরি হলে ক্ষমতায় এসেই ওই মাফিয়ারা সাধারণ মানুষের উপর প্রতিশোধ নেবেন। ছাড় পাবেন না মধ্যবিত্তেরাও।
কেবল প্রধানমন্ত্রী নন, আজ যোগী শাসনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পঞ্চমুখ হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গোরক্ষপুর আসন থেকে আজ প্রার্থী হিসাবে নিজের মনোনয়ন জমা দেন যোগী আদিত্যনাথ। মাথায় লাল তিলক কেটে গোড়া থেকেই যোগীর পাশে ছিলেন অমিত শাহ। পরে গোরক্ষপুরের একটি জনসভায় তিনি বলেন, “যোগী শাসনে রাজ্যের অপরাধীদের শায়েস্তা করা হয়েছে। এখন অপরাধীদের তিন জায়গায় পাওয়া যায়। হয় জেলে, তা না হলে উত্তরপ্রদেশের বাইরে অন্য কোনও রাজ্যে, অথবা সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী তালিকায়।” এ যাত্রায় ফৌজদারি অপরাধ রয়েছে এমন একাধিক ব্যক্তিকে প্রার্থী করায় ধাপে ধাপে আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নে সমাজবাদী পার্টির উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
তা ছাড়া আজ যে এলাকাগুলিকে প্রধানমন্ত্রী প্রচারের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তা একটি ব্রজভূমির অংশ। যেখানে ভোট হবে দ্বিতীয় পর্বে। স্বভাবতই ব্রজভূমির অঙ্গ মথুরা, বৃন্দাবন, গোর্বধন— এই এলাকাগুলি যাদব অধ্যুষিত, যারা সমাজবাদী পার্টির দীর্ঘ দিনের সমর্থক। এ যাত্রায় বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ অখিলেশ যাদবের দল এসপি। তাদের হারানোই দলের লক্ষ্য। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, উত্তরপ্রদেশে বা বিহারের রাজনীতিতে যাদব শাসনে রাজ্যের অরাজক চেহারা অতীতে বার বার সামনে এসেছে। তাই যাদব নন এমন অন্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলি যাতে একজোট হয়ে এসপি-কে হারাতে এগিয়ে আসে, সেই লক্ষ্যেই যাদব শাসনে দুর্বৃত্তায়নের ছবিটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী-অমিত শাহেরা। অতীতে যাদব শাসনে উচ্চ বর্ণ ও নিম্ন বর্ণের উপরে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব, অরাজক পরিস্থিতির স্মৃতি নতুন করে উস্কে দিয়ে এসপি-র বিরুদ্ধে প্রচারে নামার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।