নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
পেট্রল-ডিজ়েলের দাম নিয়ে চাপের মুখে মোদী সরকার আজ ফের তেল উৎপাদক দেশগুলির গোষ্ঠীর কাছে অশোধিত তেলের দাম কমানোর পক্ষে সওয়াল করল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বহুজাতিক তেল ও গ্যাস সংস্থার সিইও এবং এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা অশোধিত তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাতে প্রধানমন্ত্রী আজ সিইও-দের এ দেশে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্য, তেল ও গ্যাসে ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলতে হবে।
ওই বৈঠকের ঠিক আগে আজ তেল মন্ত্রকের সচিব তরুণ কপূর যুক্তি দিয়েছেন, ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিকে অশোধিত তেলের দাম কমানোর চেষ্টা করতে হবে। তাঁর যুক্তি, ওপেক তেলের উৎপাদন বাড়াতে পারে। অন্তত বাড়াবে বলে বার্তা দিতে পারে। তা হলেই তেলের দাম অনেকটা কমে আসবে। কিন্তু তেল রফতানিকারী দেশগুলির গোষ্ঠী ও অন্যান্যদের নিয়ে গড়া বৃহত্তর ওপেক গোষ্ঠী উৎপাদন বৃদ্ধির আর্জিতে এখনই কতটা সাড়া দেবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, এক সভায় সৌদি আরবের তেলমন্ত্রী আব্দুল আজিজ বিন সলমানের দাবি, তেলের
জোগান নিয়ে ওপেকের পদক্ষেপ বরং অন্যান্য জ্বালানির বাজারেও অনুসরণ করা উচিত!
চলতি অর্থ বছরের শুরুতে, এপ্রিলে অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলার। এথন তা ৮৫ ডলারে এসে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের চড়া উৎপাদন শুল্ক যোগ হয়ে পেট্রলের দাম ১০০ টাকা ছাপিয়েছে। ডিজ়েলের দামও দেশের অনেক জায়গায় সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে। আগামী দিনে চাহিদা আরও বাড়ার সম্ভাবনায় অশোধিত তেলের দামও বেড়েছে। কিন্তু তেল উৎপাদক দেশগুলি এখনও বর্তমান চাহিদার সঙ্গে জোগানের ভারসাম্য রেখেই এগোতে চাইছে। এখনই উৎপাদন বাড়াতে চাইছে না। তেল মন্ত্রকের সচিবের একমাত্র আশা, ইতিমধ্যেই ৮৫ ডলারে পৌঁছে যাওয়া অশোধিত তেলের দাম আর বাড়বে না। বরং কমবে। তাতে কিছুটা হলেও পেট্রল-ডিজ়েলের দামে সুরাহা মিলতে পারে।
আমদানি নির্ভরতা কমাতে প্রধানমন্ত্রী আজ দেশেই যত বেশি সম্ভব গ্যাস ও তেল উৎপাদনে জোর দিয়েছেন। সিইও-দের সঙ্গে বৈঠকে তেলের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোর থেকে নজর এখন উৎপাদন বাড়ানোয় সরে গিয়েছে। অশোধিত তেল মজুত করে রাখার পরিকাঠামো বাড়াতে হবে। সরকার গত সাত বছরে তেল-গ্যাস খনন, লাইসেন্স নীতি, গ্যাসের বিপণনের মতো ক্ষেত্রে সংস্কার করেছে।
কিন্তু এখন অশোধিত তেলের চড়া দামের ফলে ভারতের মতো আমদানি-নির্ভর দেশ যে সমস্যায় পড়েছে, তা আজ মোদী সরকার ফের স্পষ্ট করে দিয়েছে। তেল মন্ত্রকের সচিব বলেন, ভারতের পক্ষে বেশি দিন এত চড়া দাম মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তেল উৎপাদকদের সঙ্গে কড়া দর কষাকষি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দু’দিন আগেই নিউ ইয়র্কে আমেরিকার সংস্থার সিইও-দের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, অশোধিত তেলের চড়া দর বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হবে। তাঁর আগে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী ওপেকের সেক্রেটারি জেনারেল, সৌদি আরব ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির তেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অশোধিত তেলের দাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সিইও-দের বৈঠকে আজ নির্মলা ও পুরীও হাজির ছিলেন। বৈঠকে রিলায়্যান্সের সিএমডি মুকেশ অম্বানী, বেদান্ত-র চেয়ারম্যান অনিল আগরওয়াল, রোজনেফট, সৌদি আরামকো, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, আইএইচএস মার্কিট, স্ক্লামবার্জারের সিইও হাজির ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, শিল্পপতিরা মোদী সরকারের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।