ফাইল চিত্র।
কোনও আঞ্চলিক নেতা-নেত্রী নন, শুধুমাত্র দিল্লির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আম আদমি পার্টি।
আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন দিল্লির সাত বিজেপি সাংসদ, সদ্য বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী আট বিজেপি বিধায়ক এবং দল নির্বিশেষে পুরসভার কাউন্সিলরেরা। একমাত্র ব্যতিক্রম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী রবিবার রামলীলা ময়দানে সকাল ১০টায় শপথ গ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁদেরও। এ ছাড়া, গত পাঁচ বছরে কার্যত অন্তরালে থেকে দলের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করেছেন এমন প্রায় ৫০ জন আপ কর্মকর্তাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আপ নেতৃত্ব।
আপের দিল্লি বিজয়ের পর থেকেই প্রশ্ন ওঠে, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কি আবার বিরোধীদের শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হতে চলেছে? সূত্রের খবর, আপের রাজ্যসভা নেতা সঞ্জয় সিংহ বিরোধী নেতা-নেত্রীদের আমন্ত্রণের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু কেজরীবাল-সহ দলের একটি বড় অংশ আপত্তি জানায়। আপ শিবিরের ব্যাখ্যা, বিরোধী নেতা-নেত্রীদের ডাকলে সৌজন্যের খাতিরে কংগ্রেস শিবিরকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। যেখানে কংগ্রেসের ‘দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে লড়াই করে আপের উত্থান, সেখানে সনিয়া-রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক মঞ্চে থাকলে নীতিগত প্রশ্নের মুখে পড়তে হত নেতৃত্বকে। আপের এক নেতার কথায়, ‘‘বেঙ্গালুরুতে শক্তি প্রদর্শনের পরে বিরোধী ঐক্যের
কী হয়েছিল, তা সকলের মনে আছে। সে-কারণে কংগ্রেসকে আমন্ত্রণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’
বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির মোকাবিলায় প্রথম থেকেই অন্য রকম অবস্থান নিয়েছিলেন আপ নেতৃত্ব। কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্ব যখন সরাসরি শাহিন বাগের সমর্থনে সরব, তখন কিছুটা দূরত্ব রেখেই শাহিন বাগের পক্ষে মুখ খোলেন আপ নেতারা। নরম হিন্দুত্বের পথেও হাঁটে দল। দলের দাবি, সেই ‘স্বাতন্ত্র্য’ বজায় রেখে কোনও আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং তারা যে কেন্দ্রবিরোধী অন্য দলগুলির থেকে ‘আলাদা’, সেই বার্তা কেন্দ্রকে দেওয়ার জন্য ঠিক হয়, দিল্লির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরই একমাত্র আমন্ত্রণ জানানো হবে।
তা হলে মোদী-শাহ কেন? দু’জনের কেউই দিল্লি থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। আপের এক নেতার দাবি, ‘‘নীতিগত বিরোধ থাকলেও নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী আর অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এখানে ব্যক্তি নয়, পদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’ দলের ব্যাখ্যা, প্রথম পাঁচ বছরে কেন্দ্রের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের কারণে দিল্লির উন্নয়নের কাজ থমকে যায়। দ্বিতীয় পর্বে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক, তা মোটেই কাম্য নয় কেজরীবালের কাছে। এ বার শুরু থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার পক্ষপাতী তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, দু’জনের কারওই শপথ গ্রহণে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা কম। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর নিজের লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান রয়েছে। তিনি সেখানে যাবেন। অমিত শাহেরও সে দিন দলীয় কমর্সূচি রয়েছে।
শপথ নেবেন
• মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল
• মণীশ সিসৌদিয়া
• সত্যেন্দ্র জৈন
• গোপাল রাই
• কৈলাস গহলৌত
• ইমরান হুসেন
• রাজেন্দ্র গৌতম
কেজরীবালের এ বারের জয়ের অন্যতম কারণ, বিদ্যুতের বিলে ছাড়, সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি, মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাসে যাতায়াতের মতো জনমুখী প্রকল্পের রূপায়ণ। সেগুলির রূপরেখা তৈরি থেকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেই সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাঁরা পিছনে থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, সে সব আপ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদের ওই দিন সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এমন প্রায় ৫০ জন ‘অচেনা’ কর্মীকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শপথগ্রহণে।