Kaziranga

Seeds of success: বীজ কুড়িয়ে ফলবাগান, দিনবদল নাগাল্যান্ডের হাংথিংয়ের

হতদরিদ্র পরিবারে ১২টা পেট চালাতে হিমসিম খাচ্ছিল হাংথিংয়ের পরিবার। তাই দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই কিশোর হাংথিং খাওয়ার জন্য সবজির গাছ লাগান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২৫
Share:

হাংথিং। —নিজস্ব চিত্র

বন্ধ্যা বালিচরে গাছ লাগানোর পাগলামি পেয়ে বসেছিল অসমের যাদব পায়েংকে। সেই ‘পাগলামি’ই তৈরি করেছে ‘মিনি কাজিরাঙা’। যার দৌলতে যাদব পায়েং আজ পদ্মশ্রী, দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত। তিন দশকের তেমনই ‘পাগলামি’র জেরে আজ নাগাল্যান্ডের নোকলাকে মুখে মুখে ফিরছে হাংথিংয়ের নাম। হতদরিদ্র যে যুবক তিরিশ বছর আগে রাস্তা থেকে অন্যের খাওয়া ফলের বীজ সংগ্রহ করতেন, তাঁর এখন মাসে রোজগার ষাট হাজার টাকা। তাঁর সৌজন্যেই মায়ানমার ঘেঁষা নোকলাকের মানুষ প্রথম দেখল কিউই গাছ, কমলা বাগান, লিচু গাছ। গ্রামে শুরু হল এলাচ, কফি ও আলুর চাষ। তৈরি হচ্ছে তেল-সাবান-শ্যাম্পু-জ্যাম।

হতদরিদ্র পরিবারে ১২টা পেট চালাতে হিমসিম খাচ্ছিল হাংথিংয়ের পরিবার। তাই দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই কিশোর হাংথিং খাওয়ার জন্য সবজির গাছ লাগান। গাছের সবজি বাড়ায় সাহস। ঠিক করেন এ বার ফল গাছ লাগাবেন। ডিমাপুরে গিয়ে ফেলে দেওয়া কমলার স্তূপ থেকে সংগ্রহ করে আনলেন বীজ। সেই বীজে গাছ হল, হল কমলাও। আরও বাড়ল আত্মবিশ্বাস। ঠিক করলেন, নাগাল্যান্ডে হয় না এমন সব ফল ফলাবেন তিনি। অসমে গিয়েও একই ভাবে ফলপট্টির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। মানুষের ফেলে দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ফলের বীজ সংগ্রহ করতেন থলিতে। লোকে পাগল ভাবত। পরোয়া ছিল না হাংথিংয়ের। তাঁর ফল বাগান আড়েবহরে বাড়তে থাকে। ফলতে থাকে কিউই, লিচু। এমনকী কোহিমা থেকে বীজ এনে কফির চাষও শুরু করেন তিনি। চেষ্টা করেছিলেন আপেল চাষেরও। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূল ছিল না।

Advertisement

হাংথিংয়ের উদ্যোগে এখন নোকলাকের প্রায় দেড়শো পরিবার লিচু চাষ করছে। আলু চাষ করেও রোজগার করেছেন অনেকে। আর অসম থেকে আমদানি করতে হয় না আলু। এমনকী মায়ানমারের এক নাম না জানা ফলও ফলাচ্ছেন তিনি। তাঁর ফলন এখন ৪০ একর জুড়ে বিস্তৃত। আশপাশের জেলায় ঘুরে ও অন্যত্র ফল-সবজি পাঠিয়ে এখন মাসে গড়ে ষাট হাজার টাকা রোজগার তাঁর। তাঁর ফল, সবজি ও চারা কিনতে সীমান্তে আসেন মায়ানমারের ক্রেতারাও। কিন্তু দারিদ্রের দিনগুলো ভোলেননি তাই গরিবদের বিনা পয়সায় দেন ফল ও সবজি। হাংথিংয়ের উদ্যোগে মুগ্ধ এসপি তথা চিকিৎসক প্রীতপাল কৌরের উদ্যোগে পঞ্জাব থেকে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক ধর্মবীর কাম্বোজ নোকলাকে এসে নিজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা স্থানীয়দের সঙ্গে ভাগ করে নেন। প্রীতপাল হাংথিং ও তাঁর সঙ্গীদের কৃষক সংগঠন গড়ে দিয়ে নাফেড-এর অধীনে তা নথিভুক্তও করে দিয়েছেন। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কসমেটিক ও হার্বাল সামগ্রী উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। প্রশাসনের তরফে পাওয়া যন্ত্র ও প্রযুক্তির সাহায্যে তাঁরা এখন তেল, সাবান, শ্যাম্পু, জুস, জ্যাম সবই তৈরি করে ফেলছেন। হাংথিং বলেন, “আমার প্রধান উদ্দেশ্য একটাই, নিজেরা যা ফলাতে বা বানাতে পারব, তা কেন বাইরে থেকে কিনব?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement