এক বিস্ময়কর মন্দির। প্রতিদিন সমুদ্রের জলে মিলিয়ে যায়। আবার জেগে ওঠে। ভারতেই আছে এই ‘ডিজঅ্যাপিয়ারিং টেম্পল’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
গুজরাতের উপকূলীয় অংশে কভি কম্বোই নামে ছোট্ট শহরে দাঁড়িয়ে আছে এই আশ্চর্য দেবালয়। বলা হয়, সেখানে ভক্তদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেন দেব-বিগ্রহ।
লোকের মুখে মুখে এখন এর পরিচয় মূলত বিলীয়মান মন্দির হয়ে গিয়েছে। খাতায় কলমে মহাদেবের এই মন্দিরের নাম ‘স্তম্ভেশ্বর মন্দির’। ১৫০ বছরের প্রাচীন এই মন্দির আরবসাগর ও ক্যাম্বি উপসাগরের মাঝে উপকূলীয় তটরেখার কাছেই অবস্থিত।
জোয়ারের সময় সমুদ্রের নোনা জল সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয় তাকে। আবার ধীরে ধীরে ভাটার সময় বেরিয়ে আসে স্তম্ভেশ্বর মন্দির এবং চার ফুট উচ্চতার শিবলিঙ্গ।
বলা হয়, প্রকৃতি নিজের হাতে মহাদেবের জলাভিষেক করান। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শক ও পুণ্যার্থী ভিড় করেন এই মন্দিরে। জোয়ারের জলে মন্দিরের মিলিয়ে যাওয়া এবং ফের ভাটার সময়ে মন্দিরের জেগে ওঠার সাক্ষী থাকতে। কাছাকাছি আর একটি দ্রষ্টব্য হল মাহী সাগর ও সবরমতী নদীর সঙ্গমস্থল।
প্রতিদিন এখানে দূর দূরান্ত থেকে ভক্তদের ঢল নামে। সকালে মন্দিরে পুজো দেওয়া হয়। তারপর অপেক্ষা। চোখের সামনে একটু একটু করে সমুদ্রের জলে মিলিয়ে যায় দেবালয়। আবার ভাটার সময়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে স্তম্ভেশ্বর মন্দির।
ভাটার সময় মন্দিরে পূর্ণমাত্রায় পুজো অর্চনা হয়। এমনকি, মন্দির লাগোয়া জমিতে ঘুরেও বেড়ানো যায়।
স্তম্ভেশ্বর মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক পৌরাণিক আখ্যান। কথিত, তারকাসুরকে হত্যা করে অনুতপ্ত বোধ করেন শিবপুত্র কার্তিকেয়। বিষ্ণু তখন কার্তিককে বোঝান, অসুরকে হত্যা করে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা কোনও অপরাধ নয়।
কিন্তু তারকাসুরও ছিলেন শিবভক্ত। তাই তাঁকে হত্যা করে পাপবোধে বিদ্ধ হচ্ছিলেন কার্তিক। পাপস্খালনের জন্য তাঁকে পরামর্শ দিলেন ভগবান বিষ্ণু। বললেন, মহাদেবের উপাসনা করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে।
তারপর আরবসাগর ও ক্যাম্বি উপসাগরের মাঝে উপাসনায় রত হন কার্তিকেয়। বলছে পুরাণ। সেখানেই পরবর্তী কালে নির্মিত হয় স্তম্ভেশ্বর মন্দির। কিন্তু এই দেবালয় ঘিরে প্রামাণ্য ইতিহাসগত তথ্য সেভাবে পাওয়া যায় না। পুরাণ ও প্রকৃতির টানেই ভিড় জমান পুণ্যার্থীরা। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)