National News

মুম্বইয়ের সাফল্যের পর এ বার ডাক ‘দিল্লি চলো’

কৃষক আন্দোলনকে এ বার দেশের রাজধানীতে পৌঁছে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। মুম্বইয়ে বিরাট জমায়েতের পরে দিল্লি অভিযানের ডাক দিতে চলেছে কৃষক কোঅর্ডিনেশন কমিটির।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ১৬:৪৭
Share:

মুম্বইয়ের ছবির পুনরাবৃত্তি ঘটবে দিল্লিতে? আরও বড় আকারে? কৃষক নেতারা তেমনই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

মহারাষ্ট্রে বেনজির সাফল্য। এ বার তাই লক্ষ্য দিল্লি। শ’দুয়েক কৃষক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটির (এআইকেএসসিসি) ডাকে এ বার দিল্লি অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হল। রাজ্যে রাজ্যে কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ ইতিমধ্যেই অনেকটা সেরে ফেলেছে সংগঠনগুলি। দিল্লিতে বেনজির জমায়েতের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে প্রস্তুতি, খবর কোঅর্ডিনেশন কমিটি সূত্রের।

Advertisement

দেশের এমন কোনও প্রান্ত নেই, যেখানে কৃষক বিক্ষোভ হচ্ছে না। একাধিক রাজ্যে সেই বিক্ষোভ হিংসাত্মক ঘটনার রূপও নিয়ে নিয়েছে। ২০১৭-র জুনে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে গুলি চলে বিক্ষোভকারীদের উপরে। তাতে উত্তাল হয়ে যায় গোটা দেশের রাজনীতি। সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক অসন্তোষ আরও বেড়ে যায় গোটা দেশে।

মন্দসৌরের ঘটনাই এক ছাতার তলায় আনে শতাধিক কৃষক সংগঠনকে। মহারাষ্ট্রে সফল কৃষক আন্দোলন হল যে সংগঠনের নেতৃত্বে, সেই সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘মন্দসৌরে গুলিচালনার পরে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আরও অনেক কৃষক সংগঠনের নেতৃত্ব গিয়েছিলেন। সেখানেই আমাদের মধ্যে কথা হয়, আমরা এক ছাতার তলায় আসার সিদ্ধান্ত নিই।’’

Advertisement

গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

জুনের প্রথম সপ্তাহে গুলি চলেছিল মন্দসৌরে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহেই দিল্লিতে বৈঠকে বসে ১২০টি কৃষক সংগঠন। গড়ে ওঠে অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটি। বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজিত হয় কমিটির ব্যানারে। ২০১৭-র নভেম্বরে ‘সংসদ চলো’র ডাক দেয় কমিটি। তত দিনে ১২০ থেকে বেড়ে ১৮৪টি সংগঠন যোগ দিয়েছে কোঅর্ডিনেশন কমিটিতে। তবে নভেম্বরের সেই কর্মসূচি তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।

সাড়া জাগিয়ে দিল মুম্বই তথা মহারাষ্ট্র। সে রাজ্যে কৃষকদের ‘লং মার্চ’ যে ভাবে শিহরণ জাগালো গোটা দেশে, তাতে ফের উৎসাহিত কোঅর্ডিনেশন নেতারা।

কমিটি সূত্রের খবর, এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের শুরুতে হবে দিল্লি অভিযান। অসমের কৃষক আন্দোলনের সবচেয়ে বড় মুখ তথা কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈ আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের শুরুতেই দিল্লি অভিযান হবে। মহারাষ্ট্রের ছবিটা আপনারা তো দেখলেনই। শুধু একটা রাজ্যেই এই জমায়েত। সবক’টা রাজ্যের কৃষক সংগঠন মিলে দিল্লিতে কত বড় জমায়েত করবে, বুঝতেই পারছেন।’’ কোঅর্ডিনেশন কমিটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা অখিল। তাঁর দাবি, অসম থেকে অন্তত ১০ হাজার কৃষক যোগ দেবেন দিল্লির বিক্ষোভে।

হান্নান মোল্লা অবশ্য দিল্লি অভিযানের দিনক্ষণ সম্পর্কে এখনই মন্তব্য করতে চাইলেন না। এপ্রিল-মে’র দিকেই দিল্লিতে জমায়েতের ভাবনাচিন্তা যে চলছে, সে কথা স্বীকার করলেন। তবে বললেন, ‘‘১৭ মার্চ এআইকেএসসিসি-র স্টিয়ারিং কমিটি বৈঠকে বসবে। সেখানেই স্থির করা হবে পরবর্তী কর্মসূচি।’’

গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

ঠিক কোন কোন দাবি নিয়ে দিল্লি অভিযান করতে চলেছে এআইকেএসসিসি? হান্নান-অখিলরা কথায় কথায় জানালেন, কৃষকদের সমস্যা অনেক রকমের। কিন্তু সব সমস্যা একসঙ্গে সমাধানের দাবি নিয়ে ঝাঁপাবে না কমিটি।

মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান— বৃষ্টিপাত বা জলের অভাবে ভুগছেন এতগুলি রাজ্যের কৃষক। কোথাও বছরের পর বছর বৃষ্টি নেই। কোথাও প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত। কোথাও সেচের জল নেহাতই অপ্রতুল।

গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সরকার দাবি করেছিল, নর্মদা প্রকল্পের সুবাদে সেচের সমস্যা মিটে গিয়েছে। গুজরাতের বিভিন্ন নদীতে এবং সেচ ক্যানালে পর্যাপ্ত টলটলে জল দেখতেও পাওয়া যাচ্ছিল ভোটের মরসুমে। কিন্তু ভোট মিটতেই জলে টান পড়েছে। এ বার গ্রীষ্মে সেচের জল কতটুকু জোগানো যাবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ভোটের মরসুমে নদী-নালা ভরিয়ে রাখতে এত বেশি জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল জলাধারগুলি থেকে যে, গ্রীষ্মে জলের টান অবধারিত। এমন কথা শোনা যাচ্ছে গুজরাতের প্রতিটি প্রান্তে।

সমস্যা আরও রয়েছে। দেশের প্রায় সব রাজ্যে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন বিপুল সংখ্যক কৃষক। কোথাও ঋণের পরিমাণ কম, কোথাও বেশি। কিন্তু কৃষক ঋণগ্রস্ত প্রায় সর্বত্রই। একের পর এক মরসুমে যে ভাবে মার খাচ্ছেন কৃষকরা, তাতে ঋণের ফাঁস চাষির গলায় আরও চেপে বসেছে। অবিলম্বে ঋণ মকুব তাই কৃষকের অন্যতম প্রধান দাবি এই মুহূর্তে।

গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কৃষক সংগঠনগুলির হাতে অন্যতম প্রধান ইস্যু। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সংসদে যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতে ফসল ফলানোর খরচের দেড়গুণ অর্থ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে কৃষককে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে কৃষকদের সংশয় বিস্তর।

আরও পড়ুন: দাবির সঙ্গে মনও জিতল লাল মিছিল

পূর্ববর্তী বাজেটে ফসল বিমা যোজনা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। কোন রাজ্যে ক’জন কৃষক এই বিমার সুবিধা পেলেন, তা দূরবীন দিয়েও দেখা যাচ্ছে না। অতএব, জেটলির ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আদৌ কৃষকের হাতে পৌঁছবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকা স্বাভাবিক।

উত্তর-পূর্ব ভারতে আবার একটু অন্য রকম ছবি। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না পাওয়ার সমস্যা সেখানেও রয়েছে। এফসিআই কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনে না বলে অভিযোগ। সমস্যা আরও অনেক রকমের। অখিল গগৈ বললেন, ‘‘মূল সমস্যা নদীর ভাঙন। ১৯৬৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অসমের চাষযোগ্য জমির ৮ শতাংশ তলিয়ে গিয়েছে। দেশের মধ্যে অসমেই সবচেয়ে বেশি বন্যা হয়। কোনও কোনও এলাকা বছরে পাঁচ-ছ’বার বন্যায় ভেসে যায়। অসমে ২৮ শতাংশ কৃষকের জমিই নেই। আর ৩২ শতাংশ হলেন প্রান্তিক কৃষক, অর্থাৎ তাঁদের জমির পরিমাণ সাড়ে তিন বিঘারও কম। সরকারি সহায়তা ছাড়া কৃষকরদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: চাপের মুখে নতি স্বীকার, কৃষকদের সব দাবি মানল মহারাষ্ট্র সরকার

ভরসা তাই পথে নামা। বলছেন গোটা দেশের প্রায় প্রতিটি কৃষক সংগঠনের নেতারাই। যে ভাবে মুম্বই কাঁপিয়ে দিয়েছে কৃষক বিক্ষোভ, ঠিক সেই ভাবেই এ বার দিল্লিতে পা রাখতে চাইছে কৃষক সংগঠনগুলি। দাবি মূলত দু’টি— কৃষিঋণ সম্পূর্ণ মকুব, ফসল ফলানোর খরচের অন্তত দেড়গুণ মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে শস্য কিনে নেওয়া। মহারাষ্ট্রে ঝান্ডাটা ছিল সারা ভারত কৃষক সভার। দিল্লিতে জমায়েত হতে চলেছে কোঅর্ডিনেশন কমিটির ব্যানারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement