মুকুল রায় এবং রাহুল সিনহা। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার তিন বছরের মাথায় দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পেলেন মুকুল রায়। শনিবার দলের সভাপতি জে পি নড্ডা কেন্দ্রীয় পদাধিকারিদের তালিকা ঘোষণা করেছেন।
মুকুলের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি কেন্দ্রীয় পদাধিকারিদের তালিকায় নাম রয়েছে অনুপম হাজরার। ঘটনাচক্রে তিনিও দলত্যাগী তৃণমূল নেতা। বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক পদ পেয়েছেন। দলের নয়া সর্বভারতীয় মুখপাত্রদের তালিকায় রয়েছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। অন্যদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদ খুইয়েছেন রাহুল সিনহা।
পদ হারানোর খবর পেয়েই প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল। ভিডিয়ো বিবৃতিতে তিনি বলেন, “চল্লিশ বছর বিজেপির সেবা এবং বিজেপির একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করে এসেছি। জন্মলগ্ন থেকে বিজেপির সেবা করবার পুরস্কার এটাই যে— তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আসছেন, তাই আমাকে সরতে হবে। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের কিছু আর হতে পারে না। পার্টি যে পুরস্কার দিল সেই পুরস্কারের পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলতে চাই না।” এখানেই থামেননি রাহুল সিনহা। কিছুটা হুমকির সুরেই বলেন, “আমি যা বলার দশ-বারো দিনের মধ্যে বলব এবং আমার ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা ঠিক করব।” এই মন্তব্যের পরেই শুরু হয়েছে জল্পনা, রাহুল কি তবে শোধ নিতে মুকুল-অনুপমের পুরনো ঘরের দরজায় যাওয়ার কথা ভাবছেন!
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদ হারানোর পর রাহুল সিনহার প্রতিক্রিয়া।
জানুয়ারি মাসে বিজেপির সবর্ভারতীয় সভাপতি পদের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় আট মাস পর, এ দিন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ এবং বিভিন্ন মোর্চার সভাপতিদের নাম ঘোষণা করেন জে পি নড্ডা। পূর্বসূরি অমিত শাহের কমিটির পদাধিকারিদের বেশ কিছু রদবদল করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগী’, এ বার রাজ্যপালের খোঁচা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে
২০১৭-র নভেম্বরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলালেও কেন্দ্র বা রাজ্য সংগঠনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি তিনি। কেবলমাত্র বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য করে রাখা হয়েছিল তাঁকে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলিপ ঘোষের ‘দাপটে’ মুকুল কিছুটা কোণঠাসা বলেও জল্পনা ছিল রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মধ্যে।
যদিও ‘দক্ষ সংগঠক’ হিসেবে পরিচিত মুকুলকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে পারেন বলেও একাধিকবার শোনা গিয়েছে বিজেপির অন্দরে। শেষ পর্যন্ত এ দিন সেই জল্পনার অবসান হল। আমিত শাহের আমলে তৈরি পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের তালিকা অবশ্য অপরিবর্তিত রেখেছেন নড্ডা। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশ, সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং জাতীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেননকে তাঁদের পদ ও দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয়েছে এ দিন।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ পেয়ে মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া।
তবে গত বছর লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই অনুপমের জাতীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া ‘চমকপ্রদ’ বলেই মনে করছে বিজেপির একাংশ। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে লড়ে হেরে গেলেও ‘সিপিএমের দুর্গে’ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় হয়েছিলেন অনুপম। রাজ্য রাজনীতির ‘তরুণ মুখ’ হিসেবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে তুলে আনতে চাইছে বলেই অনেকে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: যৌথ উদ্যোগে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র বানাবে ভারত ও ইজরায়েল