মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়।
সম্প্রতি তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এখনও এক মাস হয়নি। তার মধ্যেই পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ উঠল, বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি নীতিপুলিশি করতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর মন্তব্য ফের প্রশ্ন তুলে দিল, কে কী পরবেন, সেটা কি অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারেন?
ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার। গুজরাতের সুরাতে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মৌসুমী। সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা প্যান্ট পরে অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন। তা নিয়েই আপত্তি জানান সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেত্রী। প্যান্টের বদলে যে তাঁর শাড়ি বা চুড়িদার পরা উচিত ছিল, সে ‘পরামর্শ’ও মৌসুমী দেন তাঁকে। অনুষ্ঠান শেষে এ নিয়ে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করলে অভিনেত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন বলে অভিযোগ।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে মঙ্গলবার মৌসুমী পাল্টা ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হেনস্থা করার জন্যই ওঁরা নানা রকম প্রশ্ন করছিলেন।’’ ঠিক কী হয়েছিল জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ‘‘ওই সঞ্চালিকা তখন ঘোষণা করছিলেন। আমি তাঁকে বলি, আপনি যে পোশাক পরে এসেছেন, সেটা এই অনুষ্ঠানের জন্য মানানসই নয়। শাড়ি বা চূড়িদার পরা উচিত ছিল।’’ এর পরেই সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, কে কী পোশাক পরবেন তা কি বিজেপি র ঠিক করে দেবে? মৌসুমীর ওই ‘পরামর্শ’ কি নীতিপুলিশি নয়? আর তাতেই চটে যান বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন, মমতা নাকি মায়াবতী, প্রধানমন্ত্রী পদে কাকে পছন্দ? অখিলেশ বললেন...
মৌসুমীর এই ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের অনেকে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এক জন মহিলা কী পোশাক পরবেন, সেটা কি বিজেপি ঠিক করে দেবে? এ প্রশ্নও করছেন তাঁরা। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘‘সবে মাত্র বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ওই বাঙালি অভিনেত্রী। অসৎ সঙ্গে পড়লে যে কী অবস্থা হয়, সেটা এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত। ওরা তো দেশ জুড়ে এটাই করছে। কে কী খাবে, কে কী পরবে— সবটা ঠিক করে দিচ্ছে। মানুষ এর জবাব খুব শীঘ্রই দেবে।’’
কিন্তু মৌসুমী এর মধ্যে দোষের কিছু দেখছেন না। তিনি বলছেন, ‘‘পূজা নামের ওই মেয়েটি যে পোশাক পরেছিল, সেটা ওই অনুষ্ঠানের জন্য ঠিক ছিল না। ও নিজেও স্বচ্ছন্দ হতে পারছিল না। বলেছিলাম, আমি তোমার মায়ের মতো। তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েই বলছি, এই পোশাক পরে তুমি সিনেমা দেখতে যাও। পার্টি করো। কিন্তু এখানে এটা ঠিক নয়। এটা আমি আমার মেয়েকেও বলি। আমি নিজেও পশ্চিমী পোশাক পরি। কিন্তু কোন জায়গায় কোনটা পরব সেটা তো বুঝতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি জানতে হবে তো! কী ভুলটা বলেছি বলুন তো!’’
আরও পড়ুন, রাজীব গাঁধীর ‘১৫ পয়সা’ তত্ত্ব তুলে কংগ্রেসকে বিঁধলেন মোদী
এ সব থেকে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও মৌসুমী ক্ষোভ রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ওই মন্তব্যের পরেই সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করে হেনস্থা শুরু করেন। মৌসুমীর কথায়, ‘‘আমাকে ইচ্ছে করে কোণঠাসা করা হচ্ছিল। ওরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ও সব করেছে। এর ভিতরে রাজনীতি কেন আসবে? প্রথমে তো আমি ভারতীয়। গণতন্ত্রে তো সকলের কথা বলার অধিকার আছে। আর যে মেয়েটিকে বলেছি তার কোনও সমস্যা নেই। অন্যদের কেন এত গায়ে লাগছে?’’
অবিজেপি শিবিরের বক্তব্য, এক জন মানুষ কী খাবেন বা পরবেন, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে ব্যাপারে কোনও রাজনৈতিক দল তো বটেই, কোনও ব্যক্তিও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাঁদের বক্তব্য, মৌসুমী ওই ধরনের ‘পরামর্শ’ দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকে আঘাত করেছেন। অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘ওই অভিনেত্রী একেবারেই ঠিক কাজ করেননি। এটাকে নীতিপুলিশি বলে।’’
(রাজনীতি, অর্থনীতি, ক্রাইম - দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)