কাশ্মীরের সেই স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের সঙ্গে পর্বতারোহীরা। —নিজস্ব চিত্র।
খাতায়কলমে পড়ুয়া সংখ্যা ১০৩ জন। শিক্ষক ৩ জন। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামটির এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পারে ছেলেমেয়েরা। তার পরে পড়তে ট্রেক করে যেতে হবে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রামে। বিদ্যুৎ সংযোগহীন এই গ্রামে এত দিনে একটি হাসপাতাল তৈরি করছে স্থানীয় প্রশাসন। কাশ্মীরের কিস্তওয়াড় জেলায় শৃঙ্গাভিযানে গিয়ে প্রত্যন্ত এই কিব্বার নালা গ্রামের স্কুলপড়ুয়াদের হাতে বইখাতা ও খেলার সরঞ্জাম তুলে দিলেন কলকাতার পর্বতারোহীরা। আয়োজন করলেন স্বাস্থ্য শিবিরেরও।
কিস্তওয়াড়ে ব্রহ্মা-১ শৃঙ্গাভিযানের শেষে, গত শনিবার কিব্বার নালা গ্রামের স্কুলে উপহার নিয়ে যান ওই আরোহীরা। তাঁদের দলনেতা রুদ্রপ্রসাদ হালদার বলেন, ‘‘১০৩ জনের কথা বললেও এ দিন স্কুলে এসেছিল ২০-২৫ জন ছাত্রছাত্রী। তাদেরই খাতা-পেন-রংপেন্সিল দিয়েছি। বাকি উপহার স্কুলেই রাখা আছে। দাবা, ফুটবল-সহ নানা খেলার সরঞ্জামও নিয়ে গিয়েছিলাম। উপহার পেয়ে ওরা মহা খুশি।’’ আর কিব্বার নালা গভর্নমেন্ট মিডল স্কুলের শিক্ষক পূরণচন্দ্র ঠাকুর বলছেন, ‘‘আমি এই স্কুলেরই ছাত্র। কোনও দিন এখানকার পড়ুয়াদের জন্য এ ভাবে কেউ উপহার আনেননি। এই খাতা-পেন্সিলে ওদের সারা বছর চলে যাবে।’’
এর জন্য অভিযানের আগে রীতিমতো ক্রাউড ফান্ডিং করেছিলেন ওই আরোহীরা। তাতে কেউ কিনে দেন জ্যামিতি বাক্স, কেউ দেন আঁকার খাতা-রং পেন্সিলের খরচ। শুধু কলকাতা বা সংলগ্ন এলাকাই নয়, দেশবিদেশ থেকে অনেকেই টাকা পাঠিয়ে এই কাজে সঙ্গী হয়েছিলেন বলে জানান পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত।
অভিযান শুরুর বহু আগে এ নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে এই গ্রাম সম্পর্কে জানতে পারেন আরোহীরা। জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে, ওই গ্রামের ২৫০ জন বাসিন্দার প্রায় সকলেই কৃষক, অতি দরিদ্র। একমাত্র স্কুলের অবস্থাও শোচনীয়। টালির চালের স্কুলবাড়িতে মেঝেয় বসেই চলে লেখাপড়া। গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ, ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচাগার, বিদ্যুৎ সংযোগ বা কম্পিউটার— কিছুই নেই সেখানে। মূলত মিড ডে মিলের টানেই স্কুলে আসে পড়ুয়ারা। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন গ্রামবাসীরাও। রুদ্রের কথায়, ‘‘অনেকেই তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা আমাদের বলেছেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে এ নিয়ে বললে যদি কিছু কাজ হয়, সেই আশায়।’’
একই দিনে গ্রামের নির্মীয়মাণ হাসপাতালে স্বাস্থ্য শিবিরও করা হয়। সেখানে ওই দলের সদস্য, পেশায় চিকিৎসক উদ্দীপন হালদারের কাছে এসে পরীক্ষা করান ৬০ জন গ্রামবাসী। তাঁদের অধিকাংশেরই হাঁটুর সমস্যা। বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে রোগীদের। বাকি ওষুধ রেখে এসেছেন নির্মীয়মাণ হাসপাতালেই।