প্রতীকী ছবি।
চুরির তদন্তে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন ছেলে। তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। সে আঘাত সহ্য করতে পারলেন না মা। বিহারের কিসানগঞ্জের অভয়রাম চাকলায় একইসঙ্গে অন্ত্যেষ্টি হল দু’জনেরই।
একটি মোটরসাইকেল চুরির তদন্তে বিহার-পশ্চিমবঙ্গ সীমানায় উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়ায় এসেছিলেন বছর পঞ্চাশের অশ্বিনী কুমার। বিহারের কিসানগঞ্জ থানার ওসি-র সঙ্গে ছিলেন সেখানকার জনা সাতেক পুলিশকর্মী। পাঞ্জিপাড়ায় ওই মামলায় অভিযুক্ত-সহ এক দল দুষ্কৃতী তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ। পাঞ্জিপাড়া পুলিশ পরে অশ্বিনীকে উদ্ধার করে ইসলামপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ কিসানগঞ্জের জানকীপুর থানার অভয়রাম চাকলায় পৌঁছয় অশ্বিনী কুমারের দেহ। অশ্বিনী কুমারের ভাই প্রবীণ কুমার জানান, ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তাঁর মা বছর সত্তরের পূর্ণিমা দেবী। আজ মৃত্যু হয় তাঁর। অশ্বিনী কুমার ও তাঁর মায়ের অন্ত্যেষ্টির সময়ে ওই পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান অভয়রাম চাকলার বাসিন্দারা।
এই ঘটনায় উত্তরবঙ্গের পাঞ্জিপাড়ার পান্তাপাড়া গ্রামে আজ সকালে আরও ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এই ঘটনায় মোট ৫ জন গ্রেফতার হল। এ দিনও এলাকায় পরিবেশ ছিল থমথমে, গোটা গ্রাম পুরুষশূন্য। ইসলামপুরের পুলিশ সুপার সচিন মক্কার জানিয়েছেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের ধরতে তল্লাশি চলছে। এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ অভিযুক্ত চার জনকে এ দিন আদালতে তোলা হয়। তাদের ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক।
অন্য দিকে ওই ঘটনায় কিসানগঞ্জ থানার আধিকারিক মণীশ কুমার-সহ ৯ পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিহার পুলিশের পূর্ণিয়া জ়োনের আইজি সুরেশ প্রসাদ গত কাল রাতে ওই নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার সময়ে উপস্থিত ওই ৯ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই মৃত্যু নিয়ে বাংলা-বিহার পুলিশের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। পুলিশ কর্তাদের মতে, এই ঘটনায় দু’রাজ্যের পুলিশের সমন্বয়ের অভাবের চিত্রই সামনে উঠে এসেছে। মৃত পুলিশ অফিসারের ভাই প্রবীণের প্রশ্ন, রাতে অভিযানের সময়ে কিসানগঞ্জ পুলিশের আরও একটি দল থাকতেও কেন তারা অশ্বিনীকে রক্ষা করতে পারল না? গণপিটুনির সময়ে সেখান থেকে কেন পালিয়ে গেল পুলিশের দলটি? পরিবারের তরফে সিবিআই তদন্তের দাবি করা হয়েছে।
কিসানগঞ্জের পুলিশ সুপার আশিস জানান, অশ্বিনী ছিলেন দক্ষ অফিসার। জেলার পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীদের এক দিনের বেতন মিলিয়ে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পূর্ণিয়ার আইজি সুরেশ প্রসাদ জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করা হবে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বিশেষ বৈঠক করবেন বলেও জানান সুরেশ।
পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, বিহার-পশ্চিমবঙ্গ সীমানার ওই এলাকায় প্রায় এক রাজ্যের অপরাধী অন্য রাজ্যে পালিয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে দু’রাজ্যের পুলিশের বৈঠক হয়েছে। তাতে দাগি অপরাধীদের তালিকা আদানপ্রদানও হয়।
২২ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুরে ভোট। তার আগে সীমানায় নজরদারির ক্ষেত্রে বিহার পুলিশের কতটা সহযোগিতা পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।