গ্রাফিক। শৌভিক দেবনাথ।
দেশে একটি নয়, কয়েকটি রাজধানী চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নেতাজি জয়ন্তীতে দিল্লি নির্ভরতা কাটানোর অভিনব ‘সুরাহা’ বাতলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, কলকাতা-সহ দেশের চার প্রান্তে চারটি রাজধানী হওয়া উচিত। বাকি তিনটি প্রস্তাবিত রাজধানীর অবস্থান হিসেবে উত্তর, দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কথা বলেছেন তিনি। এড়িয়ে গিয়েছেন পশ্চিম ভারতের নাম। ঘটনাচক্রে, দেশের ওই অংশের অন্যতম অঙ্গরাজ্য নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত।
ব্রিটিশ ভারতে সওয়া শতকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে ১৭৭২ সালে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এই শহর থেকেই ভারতের ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলি শাসন শুরু করেছিলেন। তৎকালীন বম্বে এবং মাদ্রাজ রেসিডেন্সি ছিল ফোর্ট উইলিয়মের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে। সিপাহি বিদ্রোহের পরে রানি ভিক্টোরিয়ার জমানাতেও বহাল ছিল সেই ব্যবস্থা।
তবে ১৮৬৪ সালে কলকাতার সেই আধিপত্যে চিড় ধরে। ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে হিমাচল প্রদেশের শিমলাকে বেছে নেয় ব্রিটিশ শাসকেরা। তড়িঘড়ি তৈরি হয় কালকা-শিমলা ন্যারোগেজ রেলপথ। সেই প্রথম দেশে জোড়া রাজধানীর সূচনা। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে পাকাপাকি ভাবে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়ে ওঠা বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিই ছিল রাজধানী বদলের মূল কারণ। শিমলা কিন্তু ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবেই থেকে গিয়েছিল।
অতীত এবং সাম্প্রতিক বিশ্বের মানচিত্র বলছে, একাধিক রাজধানী রয়েছে অনেক দেশেই। তবে সাধারণ ভাবে আইনসভা, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনিক বিভাগের অবস্থানের নিরিখেই তা উল্লিখিত হয়। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে প্রশাসনিক রাজধানী প্রিটোরিয়া। কেপটাউনে দেশের পার্লামেন্ট। আবার ব্লুমফনটেনে সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান হওয়ায় ওই শহর ‘বিচারবিভাগীয় রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃত। ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে আইনসভা ও বিচারবিভাগীয় কার্যকলাপ আমস্টারডাম থেকে পরিচালিত হলেও প্রশাসনিক প্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান (রাজা) অবস্থান করেন দ্য হেগ-এ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশ মালয়েশিয়ায় আইনসভা ও বাণিজ্যিক রাজধানী কুয়ালা লমপুরের পাশাপাশি রয়েছে প্রশাসনিক ও বিচারবিভাগীয় রাজধানী পুত্রাজয়া। ইজরায়েলে সরকারি রাজধানী জেরুজালেম হলেও বাণিজ্যিক এবং বৈদেশিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয় তেল আভিভ থেকে। দক্ষিণ আমেরিকার চিলি, বলিভিয়া, আফ্রিকার তানজানিয়া, ইউরোপের মন্টেনেগ্রো এমনকি, পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কাতেও রয়েছে জোড়া রাজধানী। কলম্বো থেকে প্রশাসনিক এবং বিচারবিভাগীয় কার্যকলাপ পরিচালিত হলেও পার্লামেন্ট স্থানান্তরিত হয়েছে ১০ কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠা শ্রী জয়বর্ধনেপুরা কোট্টেতে।
ভারতে জম্মু ও কাশ্মীরেও দুই রাজধানী ব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে। শীতকালে প্রকৃতিগত প্রতিকূলতার কারণে সেখানে রাজধানী স্থানান্তরিত হয় জম্মুতে। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ড সরকারও একই কারণে গ্রীষ্মে দেহরাদূন থেকে চামোলি জেলার পাহাড় ঘেরা গৌরসৌণে রাজধানী সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার নবগঠিত তেলঙ্গানা রাজ্যের কারণে হায়দরাবাদ হাতছাড়া হওয়ার পরে এক সঙ্গে তিনটি রাজধানী বানাচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ— বিশাখাপত্তনম (প্রশাসনিক), কুর্নুল (বিচারবিভাগীয়) এবং অমরাবতী (পরিষদীয়)।