প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-য় মোতায়েন চিনা সেনার সংখ্যা কমানো না হলে ভারতও একতরফা ভাবে সেনা কমাবে না। শনিবার স্পষ্ট ভাষায় এ কথা জানিয়ে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, ‘‘চিন কয়েকটি ক্ষেত্রে আপত্তি তুললেও ভারত দ্রুত গতিতে সীমান্ত অঞ্চলে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চালাচ্ছে।’’
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, লাদাখ সীমান্তে গত ৯ মাস ধরে চলা সঙ্ঘাত-পর্বের ইতি কবে ঘটবে, তা বলা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাসী। কিন্তু বিষয়টি নিরবচ্ছিন্ন স্তবিরতার মতো। নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা বা তারিখ নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়।’’ লাদাখে বেজিং বিশ্বাসভঙ্গ করেছে বলেও অভিযোগ করেন রাজনাথ।
সম্প্রতি একটি উপগ্রহ চিত্রে দাবি করা হয়েছে, অরুণাচল প্রদেশের আপার সুবনসিরি জেলায় এলএসি লঙ্খন করে আস্ত একটি গ্রাম বানিয়েছে চিন। এ প্রসঙ্গে রাজনাথের মন্তব্য, ‘‘সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে পরিকাঠামো তৈরি করেছে চিন।’’
গত বছর মে মাসে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় চিনা ফৌজের এলএসি লঙ্ঘনের ঘটনা সামনে এসেছিল। সেনা স্তরে বিভিন্ন দফায় বৈঠকের পরেও জট কাটেনি। গত ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। চিনের তরফে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল আরও বেশি। এর পরে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো’ (ডিসএনগেজমেন্ট) এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’ (ডিএসক্যালেশন)-র বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। গত ৫ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ইর বৈঠকে লাদাখে পর্যায়ক্রমে ডিসএনগেজমেন্ট এবং ডিএসক্যালেশনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়।
সেনা সূত্রের খবর, এলএসি-র কিছু অংশে তা এই সমঝোতা কার্যকর হলেও প্যাংগং হ্রদের উত্তর প্রান্তের ফিঙ্গার এরিয়া-সহ বেশ অনেকগুলি অঞ্চলে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র অবস্থান এলএসি-র এ পারে। এই আবহে গত ১৫ জানুয়ারি সশস্ত্রবাহিনীর পঞ্চম ‘ভেটেরানস ডে’ উপলক্ষে বায়ুসেনার সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজনাথ বলেছিলেন, ‘‘ভারত যুদ্ধ চায় না। কিন্তু দেশের গৌরবহানি হলে যত বড় সুপার পাওয়ারই হোক না কেন, উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ক্ষমতা ধরে ভারতীয় সেনা।’’
আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ নিরসনে নয়াদিল্লির সদিচ্ছার কথা জানাতে গিয়ে রাজনাথ শুক্রবার বলেন, "১৯ জানুয়ারি সেনা পর্যায়ের একটি বৈঠকের জন্য চিন প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বৈঠকের আগের দিন সে কথা জানানোয় আমরা বলি, বৈঠক পিছিয়ে ২৩ বা ২৪ জানুয়ারি করার জন্য।’’ শুধু সীমান্ত সমস্যা নয়, বিতর্কিত ৩ কৃষি আইনের প্রতিবাদে দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষকদের আন্দোলনের ক্ষেত্রেও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে সওয়াল করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।