এখনও স্বাভাবিক হয়নি উপত্যকার পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।
অবরুদ্ধ কাশ্মীরে কার্যত ‘বন্দি’ শৈশব। গত দু’মাসে ১৪৪ শিশুকে আটক করা হয়েছে সেখানে। ৯ থেকে ১১ বছর বয়সী ওই শিশুদের রাখা হয়েছে বিভিন্ন হোমে। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ কমিটিকে এমনটাই জানাল জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। তবে এদের কাউকেই বেআইনি ভাবে আটক করা হয়নি বলে দাবি সরকারের। রাজ্য প্রশাসনের যুক্তি, পাথর ছোড়া, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধানো এবং সরকারি ও বেসরাকরি সম্পত্তি নষ্টে যুক্ত থাকায় আটক করা হয়েছে ওই শিশুদের।
গত ৫ অগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে কেন্দ্রীয় সরকার। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ, দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করে। সেই থেকে উপত্যকার সঙ্গে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গোটা ভারতের। জারি কড়া নিয়ন্ত্রণ। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং সমাজসেবামূলক সংগঠনের তরফে দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলা হয়। আর এই দমননীতি থেকে শিশুদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ ওঠে নানা মহল থেকে।
আর এই নালিশ নিয়েই সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সমাজকর্মী এনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় এবং শান্তা সিংহ। তাঁদের অভিযোগ, উপত্যকায় বেআইনি ভাবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আটক করছে নিরাপত্তাবাহিনী। সমাজকর্মীদের এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটিকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি এনভি রমণ, আর সুভাষ রেড্ডি এবং বিআর গাবাইয়ের ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয় বিচারপতি আলি মহম্মদ মাগ্রের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের ওই কমিটি। তারপরই বিষয়টি সামনে এসেছে।
অবরুদ্ধ উপত্যকা। —ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: কোনও হিন্দুকে ভারত ছাড়তে হবে না, এনআরসির আগে নাগরিকত্ব আইন, বলে গেলেন শাহ
কমিটির তাদের রিপোর্টে কার্যত নিজেদের মতামত পেশ করেনি। শুধুমাত্র পুলিশের বয়ান উদ্ধৃত করে জমা দিয়েছে রিপোর্ট। পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, ‘‘বেআইনি ভাবে কোনও শিশুকে আটক করা হয়নি। বরং কোনও নাবালক আইন বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে জানা গেলে, আইন মেনেই তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। পাথর ছোড়ার জন্য সাময়িক ভাবে আটকে রাখা হয় তদের। পরে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের কিছু ঘটনা ঘটে থাকলেও, সামান্য ব্যাপারকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে।’’ অর্থাৎ পুলিশ কর্মী অফিসাররা কমিটির কাছে এমনই মত প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু এটাই চূড়ান্ত রিপোর্ট নয়। কী অভিযোগে এবং কত জন শিশুকে আটক করা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এডিজি-র কাছে সেই সম্পর্কে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত ওই কমিটি। জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদলতে ওই শিশুদের জামিনের কোনও আবেদন জমা পড়েছে কি না, তাও জানাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘অব কি বার... ’ ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, বললেন বিদেশমন্ত্রী ।। মোদীকে কূটনীতি শেখান, কটাক্ষ রাহুলের
এনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় এবং শান্তা সিংহের আবেদন ছাড়াও এই মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত একাধিক আবেদনের শুনানি করছে সুপ্রিম কোর্টের ওই তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত আদৌ বৈধ কি না, তার শুনানি করছে পাঁচ বিচারপতির অপর একটি ডিভিশন বেঞ্চ।