লোকসভায় রাজনাথ সিংহ। —ফাইল চিত্র
পূর্ব লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে প্রকৃত পরিস্থিতি কী, তা দেশবাসীকে জানাক সরকার— মে মাসে চিনা আগ্রাসনের পর থেকেই এই দাবি করে আসছে বিরোধীরা। বিশেষ করে রাহুল গাঁধী প্রায় প্রতিনিয়ত এ নিয়ে সরকারকে বিঁধে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী লাদাখে গিয়ে বা অন্যত্র সুর চড়ালেও কার্যত চিনের নাম করেননি। তা নিয়েও সরব বিরোধী শিবির। এমন পরিস্থিতিতেই পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চিন সঙ্ঘাত নিয়ে আজ, মঙ্গলবার লোকসভায় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। পাল্টা প্রস্তুত বিরোধীরাও। রাজনাথের বক্তব্যের সময় বিরোধীদের বাধায় হইহট্টগোলের আশঙ্কা রয়েছে।
নয়াদিল্লি-বেজিং সঙ্ঘাত নিয়ে সরকারের বিবৃতির বিষয়টি ওঠে রবিবার, সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগের দিন। ওই দিন লোকসভার বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে এক যোগে আলোচনার দাবি জানান কংগ্রেস, সিপিএম-সহ প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারা। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী ওই দিন আশ্বস্ত করেন, সংসদে এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান জানাবে। মঙ্গলবার লোকসভার অধিবেশন শুরু হবে বিকেল ৩টেয়। অধিবেশনের শুরুতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ নিয়ে বক্তব্য পেশ করবেন বলে সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে। বেজিং প্রশ্নে সরকারের বর্তমান অবস্থান এবং লাদাখ সীমান্তের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারেন তিনি।
গত ৪ মে প্যাংগং লেক, গালওয়ান উপত্যকা-সহ পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার প্রায় সর্বত্র বিপুল সেনা মোতায়েন করে চিন। তার জেরে ১৫ জুন গালওয়ানে দু’পক্ষের সেনা সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। সেই মে মাসের গোড়া থেকেই সরকারকে আক্রমণ করে চলেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য ছিল, গত এপ্রিল-মে মাস থেকে সীমান্তের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব নীরব। কংগ্রেসের প্রশ্ন, হামলাকারী চিনের নাম নিতে প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা সেনাপ্রধানের এত অস্বস্তি কেন? চিন প্রশ্নে ওই নীরবতা ভেঙে রবিবার লোকসভার বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে সংসদে মুখ খোলার দাবিতে সরব হন বিরোধী নেতারা।
আরও পড়ুন: সেনার পাশে দাঁড়ান, সংসদকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
সরকার এই নিয়ে বিবৃতি দিতে পারে বলে ওই বৈঠকেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। তিনি জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতা এবং কৌশলগত অবস্থানের কথা মাথা রেখে সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। মঙ্গলবার সকালে ফের লোকসভার বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে রাজনাথের ভাষণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলে সংসদ সূত্রে খবর।
২০১৭ সালে ডোকালামে চিনা আগ্রাসনের পরেও সরকারের বিবৃতির দাবিতে কার্যত সংসদ অচল করে দিয়েছিল বিরোধীরা। এ বার করোনা পরিস্থিতিতে সংসদের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার প্রথম দিন বাদ দিয়ে আজ, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যসভার অধিবেশন বসবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় লোকসভার অধিবেশন চলবে বিকেল ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এমন সংক্ষিপ্ত সময়েও সংশোধনী ও নতুন মিলিয়ে প্রায় ২০টি বিল পেশ এবং তা পাশ করানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। বিরোধীদের হট্টগোলে সেই বিলগুলি আটকে যাক, তা চাইছে না সরকার পক্ষ। আবার ২০১৭-র পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তিও চায় না মোদী সরকার।
আরও পড়ুন: বিধানসভা ভোটের মুখে হিন্দিভাষীদের কাছে পৌঁছতে সেল মমতার
অন্য দিকে পূর্ব লাদাখ সীমান্তেও কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে ভারত। গত দু’সপ্তাহে অন্তত চার বার প্যাংগং লেকের দক্ষিণ দিকে চিনা আগ্রাসনের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু চিনা বাহিনীর সব প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। ২৯-৩০ অগস্ট রাতে চিনা বাহিনী পিএলএ ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার চেষ্টা করলেও তা রুখে দিয়েছেন ভারতীয় জওয়ানরা। শেষ বার ৩১ অগস্ট দিনের বেলা ভারতীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছিল চিনা সেনা। শূন্যে গুলি চালিয়ে ফিরে যায় চিনা বাহিনী। কিন্তু ভারতীয় বাহিনী সংযত থেকে তাদের প্রতিহত করেছিল। সেনার এমন সুবিধাজনক অবস্থান থাকার কৃতিত্বও এই সময় দাবি করতে পারবে সরকার। এই সব কারণেই সরকার তথা রাজনাথের বিবৃতি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।