প্রতীকী ছবি।
আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হিসেবে সীমান্তের দু’টি চেকপোস্ট দিয়ে শুরু হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিনিময় বাণিজ্য। পরে ভারতীয় গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা ফল ও অন্য সামগ্রীর ব্যবসা থেকে আসা অর্থের একটা অংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির জন্য। আনা হচ্ছে অস্ত্র, মাদক, জাল নোটও। এর পরে ২০১৯ সালে স্থগিত করা হয়েছে এই সীমান্ত-ব্যবসা। কিন্তু পাঁচ বছর আগে করা একটি মামলার তদন্তে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এআইএ) রবিবার জম্মুর পুঞ্চ জেলার নয়টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। তাদের গোয়েন্দাদের সঙ্গে ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, ইন্দোটিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) এবং সিআরপি।
সীমান্ত-বাণিজ্যের অর্থ কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে কাজে লাগানোর অভিযোগে ২০১৬-র ৯ ডিসেম্বর মামলাটি দায়ের করেছিল এনআইএ। তাতে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে যে সব সামগ্রী পাঠানো হয়, তার সঙ্গে মাদক, অস্ত্রশস্ত্র এবং জাল নোট ভারতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে ২০১৯-এ নিয়ন্ত্রণ রেখার দু’টি চেকপোস্ট— উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার সালামাবাদ এবং জম্মুর পুঞ্চ জেলার চাখন-দা-বাগ দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আস্থামূলক পদক্ষেপ হিসাবে ২০০৮-এ এই সীমান্ত-বাণিজ্য শুরু করেছিল ভারত ও পাকিস্তান। ঠিক হয়েছিল, বিনিময় প্রথায় শুধু দুই দেশে উৎপন্ন সামগ্রী কেনাবেচা হবে সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখার চেকপোস্টগুলি দিয়ে। তৃতীয় কোনও দেশে উৎপাদিত সামগ্রী দিয়ে সীমান্ত-ব্যবসা করা যাবে না। কিন্তু ক্যালাফর্নিয়া আমন্ডের মতো মূল্যবান সামগ্রী পাকিস্তান থেকে টন টন আমদানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কম দাম দেখিয়ে এই সামগ্রী ভারতে আমদানি করে বিপুল দামে বাজারে বিক্রি করা হত, আর সেই বাড়তি অর্থ জঙ্গি সংগঠনের কাজে ব্যবহার হত। এনআইএ-র অভিযোগ, আপেল ও অন্যান্য ফলের চালানের মধ্যে অনায়াসে পাকিস্তান থেকে চলে আসত পিস্তল ও বুলেটের ম্যাগাজিন। এমনকি অ্যাসল্ট রাইফেল টুকরো করে খুলে পাঠানো হয়েছে এ পারে। জঙ্গিদের কাছে সেগুলি পৌঁছে দিয়েছে আমদানিকারীরাই। জাল নোটও তুলে দেওয়া হয়েছে কারবারিদের হাতে। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ছিল এই সীমান্ত-বাণিজ্য শুরুর উদ্দেশ্য। কিন্তু পাকিস্তানের তরফে তার অপব্যবহার করে কাশ্মীরে সন্ত্রাস রফতানি করা শুরু হয়েছিল।
সেই মামলার সূত্রেই রবিবার জম্মুর পুঞ্চ জেলার নয়টি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। এআইএ জানিয়েছে, বহু তথ্য, ডিজিটাল যন্ত্র ও নথি বাজেয়াপ্ত করা গিয়েছে, যা থেকে আমদানিকারীদের সঙ্গে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগাযোগ প্রমাণ করা সম্ভব। ভুয়ো নথি দেখিয়ে ঘোষণার চেয়ে বহু গুণ বাড়তি আমদানির প্রমাণও মিলেছে। তদন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন এআইএ-র মুখপাত্র।
শনিবার রাতেই জম্মুতে পাকিস্তান সীমান্তের অদূরে একটি গ্রামে একটি প্যাকেট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেটি খুলে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল, তিনটি ম্যাগাজিন এবং একটি শক্তিশালী টেলিস্কোপ মিলেছে। আলমোরে মণ্ডল নামে গ্রামটির এক বাসিন্দা গভীর রাতে একটি গুনগুন শব্দ পান। তার পরে ভারী কিছু উপর থেকে পড়ার আওয়াজে বাড়ির বাইরে এসে ওই প্যাকেটটি দেখতে পান। দেরি না-করে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে প্যাকেটটি উদ্ধার করে। সীমান্তের ও দিক থেকে ড্রোনের মাধ্যমে এই অস্ত্রশস্ত্র ভারতীয় ভূখণ্ডে ফেলা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। এ দিনই অনন্তনাগে পুলিশের চৌকি লক্ষ করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। কিন্তু সেটি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে নিরাপদ জায়গায় পড়ে ফেটে যাওয়ায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শ্রীনগরে জঙ্গির গুলিতে এক জন অসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জখম হয়েছেন আর এক জন। সন্দেহভাজন জঙ্গিরা আতঙ্ক ছড়াতে গুলি ছুড়েছে বলে পুলিশের দাবি।