জুবিলি হিল্সের পরাজিত ‘সৈনিক’ মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ছবি: পিটিআই।
দল জিতলেও তিনি বাজিমাত করতে পারলেন না। তাঁর উপর অনেক আস্থা, আশা-ভরসা রেখেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু রাজনীতির উইকেটে এ বার ব্যর্থই হলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ঘরের মাঠে ডাহা ফেল করল তাঁর ‘কব্জির মোচড়’। প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) মগন্তি গোপীনাথের কাছে ‘ক্লিন বোল্ড’ হয়ে গেলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার। তিনি ৬৪২১২ ভোটে হেরে গেলেন।
তেলঙ্গানার জুবিলি হিল্স থেকে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছেন ‘আজ্জু’ (ক্রিকেট দুনিয়ায় এই নামেই পরিচিত তিনি)। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়— এই তিন রাজ্যে যখন গেরুয়া ঝড় চলছে, তখন কংগ্রেস একমাত্র আশার আলো দেখিয়েছে তেলঙ্গানা। তবে দলের ‘হাত’ মজবুত হলেও নেতৃত্বকে আশাহত করলেন প্রাক্তন অধিনায়ক। রবিবার ভোটগণনার শুরু থেকে অবশ্য এগিয়ে ছিলেন আজহার। আট রাউন্ড পর্যন্ত এগিয়ে থাকলেও নবম রাউন্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী বিআরএস প্রার্থী গোপীনাথের থেকে দেড় হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েন। সেই ব্যবধান কমেনি। বরং রাউন্ড যত এগিয়েছে, তত বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের পর পরই আজহার জানিয়েছিলেন, এটি তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। একই সঙ্গে জোরগলায় দাবি করেছিলেন, জুবিলি হিল্সের মানুষ তাঁকে খুবই পছন্দ করেন। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাঁর পাশেই থাকবেন। কিন্তু আজহারের সেই দাবি ভুল প্রমাণ করল তাঁর নিজের ‘গড়’ই। দল তাঁর উপর আস্থা রাখলেও আস্থা রাখতে পারলেন না জুবিলি হিল্সের ভোটদাতারা। ফলে রাজনীতির ময়দানে জয়ের ‘ট্রফি’ তুলে নিলেন বিআরএস প্রার্থী গোপীনাথ।
পর পর দু’টি লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন আজহার। প্রথম বার ২০০৯ সালে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ আসনে। দ্বিতীয় বার ২০১৪ সালে রাজস্থানের টঙ্ক-সওয়াই মাধোপুর আসনে। মোরাদাবাদে বাজিমাত করতে পারলেও টঙ্কে কিন্তু হারের মুখ দেখতে হয়েছিল আজহারকে। তার পরে ২০১৮ সালে তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় আজহারকে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে হায়দরাবাদ বা সেকেন্দ্রাবাদ আসনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে জোর জল্পনা চলে। কিন্তু শেষমেশ তিনি ভোটে লড়েননি।
লোকসভা নির্বাচনে ‘বাইরের মাঠে’ প্রার্থী হলেও এ বার বিধানসভা নির্বাচনে ‘ঘরের মাঠে’ প্রার্থী হয়েছিলেন ‘আজ্জু’। তা-ও আবার নিজের ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত জুবিলি হিল্সে। কংগ্রেসের পি বিষ্ণুবর্ধন রেড্ডিকে পিছনে ফেলে ভোটে লড়ার টিকিট ছিনিয়ে নেন আজহার। ঘটনাচক্রে, ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে এই আসনেই জিতেছিলেন বিষ্ণুবর্ধন। কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিআরএস নেতা গোপীনাথের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। এ বার বিষ্ণুবর্ধনের থেকে আজহারের উপরই বেশি আস্থা রেখেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
জুবিলি হিল্সে এ বার প্রথম প্রার্থী দিয়েছিল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির পার্টি এআইএমআইএম (মিম)। প্রার্থী হয়েছিলেন মহম্মদ রশিদ ফারাজুদ্দিন। ওই আসনে মিম প্রার্থী দেওয়ার পরই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা কংগ্রেসের ভোট ভাগাভাগি হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই ভোট ভাগাভাগিই কি আজহারকে হারিয়ে দিল?
তেলঙ্গানায় নির্বাচনের পর বেশিরভাগ বুথফেরত সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, এ বার বিআরএসকে সরিয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে চলেছে কংগ্রেস। রবিবার ভোটগণনার দিন সকাল থেকে সেই প্রবণতা আরও প্রকট হয়। রাজ্যের মসনদে যে কংগ্রেস বসতে চলেছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় দুপুরের মধ্যেই। যেমন বেলা গড়ানোর আগে স্পষ্ট হয়ে যায়, আজহারের ইনিংস শেষ।