আয়করে বন্ধুত্বের ছোঁয়া চান মোদী

মহাভারতে ব্যাসদেব বলেছিলেন, মৌমাছি যেমন ফুলের মধু খায়, তেমন করে রাজাকে কর আদায় করতে হবে। মধু খাওয়াও হবে, ফুলের ব্যথাও লাগবে না।নরেন্দ্র মোদী চান, তাঁর সরকার ভালবেসে কর আদায় করুক। আয়কর অফিসার মানেই জুজু নন, তাঁরা হবেন সাধারণ মানুষের বন্ধু।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ১০:৩৩
Share:

মহাভারতে ব্যাসদেব বলেছিলেন, মৌমাছি যেমন ফুলের মধু খায়, তেমন করে রাজাকে কর আদায় করতে হবে। মধু খাওয়াও হবে, ফুলের ব্যথাও লাগবে না।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী চান, তাঁর সরকার ভালবেসে কর আদায় করুক। আয়কর অফিসার মানেই জুজু নন, তাঁরা হবেন সাধারণ মানুষের বন্ধু।

কাজটা সহজ নয়, মোদী নিজেও জানেন। তাই আয়কর ও শুল্ক অফিসারদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজেই মাঠে নামছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ডাক পড়ছে চেতন ভগতের। ‘ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান’ উপন্যাসের লেখকের এ বার দায়িত্ব, ‘ট্যাক্সিং উইথ লাভ’ বোঝানো।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের তথ্য বলছে, প্রায় ১২০ কোটির দেশে মাত্র ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ আয়কর মেটান। অর্থাৎ, জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। বাজেট তৈরি করতে বসলেই দাবি ওঠে, আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো হোক। অথচ তা করতে গেলে আয়কর দাতার সংখ্যা কমে যায়। আবার করের হার বাড়াতে গেলেও রয়েছে ভোটব্যাঙ্ককে চটানোর আশঙ্কা।

তা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে কী ভাবে? উন্নয়নের অর্থই বা কোথা থেকে আসবে?

এই হেঁয়ালির সমাধান করতেই আয়কর বা শুল্ক দফতরের সঙ্গে সাধারণ চাকুরিজীবী থেকে ছোট ব্যবসায়ীদের দোস্তি তৈরি করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ
জেটলি। তাই আগামিকাল থেকে শুরু হতে চলা আয়কর ও শুল্ক দফতরের অফিসারদের সম্মেলন ‘রাজস্ব জ্ঞানসঙ্গম’-এ মোদী নিজেই হাজির হচ্ছেন। এই ধরনের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি এই প্রথম। মোদীর লক্ষ্য, আয়করদাতাদের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিষেবা দিতে অফিসারদের উদ্বুদ্ধ করা। এই সম্মেলনেই ডাক পেয়েছেন চেতন ভগত থেকে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ শালিনী নারায়ণনরা।

হংকংয়ে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কারের চাকরি ছেড়ে লেখক-জীবন শুরু করা চেতনের মতে, ‘আয়করদাতারা চোর আর আমরা পুলিশ’— সবার আগে এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে অফিসারদের। যাঁরা কর দিচ্ছেন, তাঁদের ‘খদ্দের-ভগবান’ হিসেবে দেখতে হবে। সম্প্রতি এক নিবন্ধে চেতন লিখেছেন, কর জমা দেওয়ার ফর্মগুলির সুন্দর নাম দিতে হবে। এমনিতেই কর জমা দিতে গিয়ে ভুলভ্রান্তির ভয় থাকে। তার পর ‘আইটিআর-ফোর’, ‘২৬-এএস’— এই সব নাম শুনলেই লোকে ভয় পেয়ে যান। চেতনের উপদেশ, আয়কর জমার ফর্ম কত সহজ-সরল হতে পারে, তা বোঝার জন্য এ দেশের অফিসাররা হংকং-সিঙ্গাপুরের ফর্মগুলো ডাউনলোড করে দেখতে পারেন।

নিবন্ধে চেতন আরও বলছেন, যাঁরা সবথেকে বেশি কর দিচ্ছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটা চিঠি পাঠাক সরকার। সঙ্গে ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখার মতো একটা উপহার। কেউ কর জমা দিতে গিয়ে ভুল করলে তাঁকে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানোও বন্ধ হোক। কর জমা দেওয়া, রিটার্ন ফাইলের খুঁটিনাটি দিকগুলি আমজনতাকে সহজে বোঝানোর জন্য তৈরি হোক আরামদায়ক গাইডেন্স সেন্টার। তা ছাড়া, সাধারণ মানুষ যদি জানতে পারেন, তাঁদের করের টাকায় কোথায় কী উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, তা হলেও কর ফাঁকির প্রবণতা কমবে।

মোদী সেটাই চান। দোস্তির ছোঁয়ায় বদলে দিতে চান মান্ধাতা আমলের সরকারি অফিসের ছবিটা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement