উন্নয়নের প্রশ্নে মমতাকে পাশে চান মোদীর মন্ত্রী

কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীক্ষ্ন আক্রমণ করছেন, সেই সময় দিল্লিতে বসে উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথাই বললেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী। মোদী সরকারের একশো দিন উপলক্ষে মন্ত্রকের কাজকর্ম ও পরিকল্পনাকে তুলে ধরতে মন্ত্রীরা এখন একে একে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। আজ ছিল বিদ্যুৎ, কয়লা ও অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের পালা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০১
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে পীযূষ গয়াল। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীক্ষ্ন আক্রমণ করছেন, সেই সময় দিল্লিতে বসে উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথাই বললেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী।

Advertisement

মোদী সরকারের একশো দিন উপলক্ষে মন্ত্রকের কাজকর্ম ও পরিকল্পনাকে তুলে ধরতে মন্ত্রীরা এখন একে একে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। আজ ছিল বিদ্যুৎ, কয়লা ও অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের পালা। দিল্লিতে মোদী সরকার গঠিত হওয়ার পরে প্রথম যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন, তিনি পীযূষই। সরকারের একশো দিনের শেষে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কর্নাটকের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, আজ তা কবুল করেন পীযূষ। তুলনায় মমতার প্রতি তাঁর সুর ছিল অনেকটাই নরম। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মেনে পশ্চিমবঙ্গকে সব রকম সহযোগিতা করতে সক্রিয় হবে কেন্দ্র।” বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যদিও স্পষ্ট করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই আরও জোরালো করা হবে। তবে এর সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ককে মেলানো হবে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মর্যাদা রেখে মোদী সরকার রাজ্যকে সহযোগিতা করবে। আজ কলকাতায় তৃণমূলকে অমিত শাহের আক্রমণ ও দিল্লিতে গয়ালের দেওয়া সহযোগিতার বার্তা দলের এই সামগ্রিক নীতিরই অঙ্গ।

প্রতিটি ঘরে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা রূপায়ণের ভার পীযূষের উপর। দিল্লি, রাজস্থান ও অন্ধ্রপ্রদেশে এ জন্য প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, “আমাকে বলা হয়েছে, সে রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রয়েছে। কোনও ঘাটতি নেই।” গত জুনে নবান্নে মমতার সঙ্গে বৈঠকের উল্লেখ করে পীযূষ বলেন, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় একটি সেসের বিষয় উঠে এসেছে, যা একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে। সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে জমি পাওয়া যে এখনও সমস্যা, সেটিও বলতে ভোলেননি তিনি। যদিও এই বিষয়ে কোনও আক্রমণের পথে যাননি পীযূষ। বরং বলেন, পশ্চিমবঙ্গ এখনও অপ্রচলিত শক্তিতে পিছিয়ে। মমতার কাছে তাঁর আর্জি, তিনি জমির ব্যবস্থা করে অপ্রচলিত শক্তির কাজে এগিয়ে এলে কেন্দ্র খুশি হবে।

Advertisement

পরে পীযূষ জানান, রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু রাজ্যের থেকে বাধা আসছে বলে দাবি মন্ত্রীর। মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের সঙ্গে সংঘাত যেমন তীব্র হয়ে উঠেছে। পীযূষ বলেন, “চহ্বাণ আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করায় আমি উন্নয়ন নিয়ে তাঁর রাজনীতির কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। এক মাস ধরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইছি, অথচ তাঁর সাক্ষাৎ মিলছে না।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগের পরে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, “বিদ্যুৎ সঙ্কটের বিষয়টি জাতীয় স্তরেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্র আদৌ সহযোগিতা করছেন না। বরং রাজনীতি করছে।” পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এই ধরনের সংঘাতের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়নি বলেই দাবি করছেন পীযূষ।

সরকারি স্তরে সহযোগিতা ও রাজনৈতিক স্তরে সংঘাত-- এই দ্বিমুখী কৌশলের পিছনে আরও একটি রণকৌশল রয়েছে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মতে, মোদী উন্নয়নের প্রশ্নে কোনও রকম আপস করতে চান না। আবার রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া উন্নয়নও অসম্ভব। কোনও রাজ্য তাতে সাড়া না দিলে রাজনৈতিক ভাবে তার বিরুদ্ধে প্রচার করা হবে। তাঁর যুক্তি, মহারাষ্ট্র অসহযোগিতা করতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মুখ খুলছেন। অথচ উন্নয়নের প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গকেও সব রকম সাহায্য করছে কেন্দ্র। কিন্তু তারা সহযোগিতা না করলে সেটিও বিজেপির হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement