প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলানোর রেওয়াজ ভেঙে গত বছর টানা দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে বামেরা। লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিপুল সাফল্য পাওয়া কংগ্রেসই প্রধান বিরোধী দল। সিলভার লাইন প্রকল্প হোক বা সোনা পাচার-কাণ্ডের অভিযোগ, বামেদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লড়ছে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ-ই। দাগ কাটতে পারেনি বিজেপি। কেন কেরলে গেরুয়া শিবিরের এমন দশা, তার জন্য দলের রাজ্য নেতৃত্বকে এ বার তিরস্কার শুনতে হল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে!
সরকারি কর্মসূচিতে সম্প্রতি কেরলে গিয়েছিলেন মোদী। সেই সময়ে বিজেপির কোর কমিটির সঙ্গে তাঁর একটি বৈঠক হয়েছিল। সূত্রের খবর, সেই আলোচনাতেই দক্ষিণী ওই রাজ্যে বিজেপির অগ্রগতি সম্পর্কে অসন্তোষ গোপন রাখেননি মোদী। তাঁর মতে, বিজেপির মতাদর্শ প্রচার ও প্রসারের যথেষ্ট সুযোগ কেরলে আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই রাজ্যে বিজেপির জমি ঠিকমতো তৈরি করা যায়নি। বিজেপি যে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে, কেরলে গেলে তা মনেই হয় না— এমন কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বলে সূত্রের খবর।
কেরলের রাজনৈতিক ও আর্থ-সমাজিক পরিস্থিতি কী রকম, বিজেপির কাজে সুবিধা-অসুবিধা কোথায়, এ সবের উপরে দলের রাজ্য নেতৃত্ব সবিস্তার একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মোদীও ওই রিপোর্টের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তার পরেই কেরলে দলের কাজকর্ম তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ জাভড়েকরকে।
দ্বিতীয় বার আরও বেশি আসনে জিতে এনডিএ যখন ২০১৯ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফেরে এবং মোদী ফের প্রধানমন্ত্রী হন, সেই সময়ে কেরলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ ১৯টি আসন জিতেছিল। বাকি একটি আসন পেয়েছিল সিপিএম। বিজেপির ঝুলি শূন্য ছিল। রাজ্যের বিধানসভায় উপনির্বাচনে জিতে একটি আসন ছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সেই আসনটিও বিজেপিকে হারিয়ে জিতে নিয়েছে সিপিএম। বিধানসভায় গেরুয়া শিবির এখন শূন্য, তাদের ভোট-প্রাপ্তির হারও প্রায় ৩% কমে গিয়েছে গত বছর। তার পরে বিধানসভার উপনির্বাচন বা স্থানীয় প্রশাসনের ভোটেও তারা বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মোদী। সংগঠনে জোর দেওয়া, নতুন নেতৃত্ব তুলে আনায় নজর দেওয়ার কথাও বলেছেন।
বিজেপির কেরল রাজ্য নেতৃত্বের মতে, সবরীমালা-সহ নানা বিষয়ে যে রাজ্যে প্রভূত উত্তেজনা হয়, ধর্ম বা আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে অনেক মানুষ যুক্ত, সেখানে গেরুয়া শিবিরের জমি ভাল তৈরি হবে— সাধারণ ভাবে এমন ধারণা থাকতে পারে। তবে কেরলে মুসলিমের পাশাপাশি খ্রিস্টান জনসংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। অন্য অনেক রাজ্যে মুসলিম ভোট না পেয়েও মূলত হিন্দু সমর্থনের জোরে বিজেপি এগিয়েছে। কিন্তু কেরলে খ্রিস্টান অংশের মধ্যে বিজেপির কোনও প্রভাবই নেই এবং সেটা নির্বাচনে ধাক্কার অন্যতম বড় কারণ। বিজেপির কেরল রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন অবশ্য এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সাংগঠনিক ভাবে আমাদের আরও অনেক এগোতে হবে। সাংগঠনিক স্তরেই আমরা বিভিন্ন ভাবনা-চিন্তা করছি।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং এলডিএফের আহ্বায়ক ই পি জয়রাজনের কটাক্ষ, ‘‘কেরলের মানুষ সাম্প্রদায়িক কোনও শক্তিকে সমর্থন করেন না। তাই বিজেপি এখানে জমি পায় না। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে কেন্দ্রের মদতে তারা এখন রাজভবনকে কাজে লাগাচ্ছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য!’’ প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান সই না করায় এই মুহূর্তে কেরলে আটকে রয়েছে ১২টি বিল। রাজ্যপাল বলেছেন, ১৭ সেপ্টেম্বরের পরে তিনি বিলের বিষয়ে বিবেচনা করবেন।