ফাইল চিত্র।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আরজেডি-র তেজস্বী যাদব-সহ রাজ্যের সমস্ত দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দিল্লি এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করেছিলেন। দাবি ছিল একটাই, জাতিগণনা।
এ বার সেই মোদী সরকারই জাতিগণনায় মত নেই বলে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে দেওয়ার পরে বিজেপি শরিক জেডিইউ প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে। মায়াবতী থেকে লালু প্রসাদ— বাকি সব দলের নেতারাই কেন্দ্রের এই অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু বিহারে বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসে
থাকা নীতিশের দলের নেতাদের সে উপায় নেই।
জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী বলেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ‘নিরাশাজনক’। নীতিশের দরবারের পরেও কেন্দ্রের এই অবস্থানে যে তাঁরা হতাশ, তা-ও বলছেন ত্যাগী। তাঁর বক্তব্য, দলের মধ্যে এ বিষয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র কী হলফনামা দিয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে চর্চা হবে। বিহারের মন্ত্রী, জেডিইউ নেতা সঞ্জয়কুমার ঝা বলেছেন, তাঁরা এখনও আশাবাদী যে, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে ওবিসি ভোটব্যাঙ্ক যত বেশি সম্ভব ঝোলায় পুরতে চাইছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে মোদী সরকার ডাক্তারি পড়ায় ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণ, মন্ত্রিসভায় ওবিসি নেতাদের অন্তর্ভুক্তি, রাজ্যগুলিকে ওবিসি তালিকা তৈরির ক্ষমতা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করেছে। উল্টো দিকে বিজেপি তথা এনডিএ-র ভিতরে-বাইরে ওবিসিদের আসল সংখ্যা গণনার দাবি উঠেছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০২১-এর জনগণনায় কেবল তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের বিষয়েই তথ্য সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। ওবিসি-দের বাদ রাখাটা সরকারের ‘সচেতন নীতিগত সিদ্ধান্ত’। কেন্দ্রের আর্জি, সুপ্রিম কোর্ট যেন ওবিসিদের গণনার নির্দেশ না দেয়।
আজ বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেছেন, কেন্দ্রের হলফনামায় ফাঁস হয়ে গিয়েছে যে, বিজেপি ভোটের স্বার্থে ওবিসি রাজনীতি করছে। এসসি, এসটি-দের সঙ্গে ওবিসিদের গণনার দাবি গোটা দেশেই উঠেছে। আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদের প্রশ্ন, যদি পশু-পাখির গণনা হতে পারে, তা হলে ওবিসিদের সংখ্যা গণনা হবে না কেন? বিজেপি-আরএসএস ওবিসি-দের এত ‘ঘৃণা’ করে কেন? জাতিগণনা হলে সমাজের সব শ্রেণির মানুষেরই উপকার হবে বলে তাঁর মত। বিজেপির এই অবস্থানের পরে কংগ্রেস কী কৌশল নেবে, তা ঠিক করতে আজ রাহুল গাঁধী দিল্লিতে দলিত সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিজেপির আশঙ্কা হল, জাতিগণনায় ওবিসিদের জনসংখ্যার হার ৫০ শতাংশের বেশি দেখা গেলে সেই অনুপাতে সংরক্ষণ দেওয়ার দাবি উঠবে। তাতে উচ্চবর্ণের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী, বিজেপি নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য বিরোধীদের পাল্টা জবাবে বলেছেন, ‘‘মায়াবতী দলিত-অনগ্রসরদের জন্য গলা ফাটালেও নিজে ক্ষমতায় থাকতে তাঁদের জন্য কিছুই করেননি।’’
বিজেপির মধ্যে থেকেও ওবিসিদের সংখ্যা গণনার দাবি উঠেছিল। বিজেপির ওবিসি মোর্চার নেতা কে লক্ষ্মণ কেন্দ্রের অবস্থানকে সমর্থন করে বলেছেন, ইউপিএ জমানায় আর্থ-সামাজিক জাতিগণনার দাবি উঠেছিল। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান সংগ্রহের কাজটি কতখানি কঠিন, তা বোঝা গিয়েছে। তাঁর মতে, আগে রাজ্যগুলির এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়া উচিত। প্রথমে রাজ্য স্তরে জাতিগণনা করা যেতে পারে।