ফাইল চিত্র।
কয়লা খনিতে দেশি-বিদেশি লগ্নি টানতে এ বার কয়লা ক্ষেত্রের দরজা কার্যত হাট করে খুলে দিল মোদী সরকার। এত দিন যে সব সংস্থা বিদ্যুৎ বা ইস্পাত উৎপাদন বা কয়লা ধোয়ার কাজ করে, তাদেরই সরকার কয়লা খনি নিলামে দিতে পারত। এখন থেকে আর সেই শর্ত থাকছে না। তার বদলে যে কোনও সংস্থাই কয়লা খনন করে যেখানে খুশি তা বিক্রি করতে পারবে। এ দেশে কয়লা খননে জড়িত থাকলে তবেই এত দিন কয়লা খনির নিলামে অংশ নেওয়া যেত। সেই শর্তও উঠে যাচ্ছে। কয়লা ক্ষেত্রের এই সংস্কারের জন্য আইন সংশোধন করতে অধ্যাদেশ জারি করতে চলেছে মোদী সরকার। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়েছে।
এর ফলে কয়লা খননে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব হতে চলেছে। সেই সঙ্গে আগামী দিনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এ দেশে এলে কোল ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ মোদী সরকার আশা করছে, বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার ফলে গ্লেনকোর, অ্যাংলো আমেরিকান, বিএইচপি গ্রুপ, রিও টিন্টো, পিবডি এনার্জি গ্রুপ এ দেশে কয়লা খনির নিলামে অংশ নেবে। ফলে কোল ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর অবশ্য দাবি, ‘‘কোল ইন্ডিয়াকে মজবুত করা হবে। আজকের সিদ্ধান্তের ফলে ২০২৩’২৪-এর মধ্যে দেশে ১০০০ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে। ওই বছর দেশে কয়লার চাহিদা ১৪০০ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে। এত দিন কোল ইন্ডিয়ার উপরেই ১০০০ মিলিয়ন টন উৎপাদনের দায় ছিল। এ বার বেসরকারি ক্ষেত্র, বিদেশি লগ্নি সেই অভাব পূরণ করবে। তবে কোল ইন্ডিয়ার কাছে যথেষ্ট খনি রয়েছে। কোল ইন্ডিয়া এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’’
আজকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্প মহল। শিল্পপতি সজ্জন জিন্দালের মতে, ‘‘এই সিদ্ধান্তে দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানির উপর নির্ভরতা কমবে। যার জন্য বছরে ১৫০০ কোটি ডলার খরচ হয়। আজকের দিনে যখন তেলের দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তখন এই সিদ্ধান্ত জ্বালানি ক্ষেত্রে দেশকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে।’’
কয়লা মন্ত্রকের দাবি, কয়লার ভাণ্ডারের নিরিখে ভারত গোটা বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও গত বছর বিদেশ থেকে ২৩৫ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৫ মিলিয়ন টনের প্রয়োজন এ দেশের খনি থেকেই মেটানো যেত। তা হলে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় হত। কয়লা ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য এই অধ্যাদেশে ১৯৫৭ সালের খনি-খনিজ উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ আইন ও ২০১৫-এর কয়লা খনি বিশেষ ব্যবস্থা আইনে সংশোধন আসতে চলেছে।
কিন্তু এক মাসের মধ্যেই সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। তা সত্বেও সরকার অধ্যাদেশের পথে হাঁটল কেন? কয়লা মন্ত্রীর জবাব, বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৩৩৪টি খনির লিজের মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হতে চলেছে। তার মধ্যে ৪৬টি খনিতে কাজ চলছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেই সব লিজের মেয়াদ দু’বছর বাড়িয়ে দেওয়া হল। নীতিগত অনিশ্চয়তা যাতে তৈরি না হয়, সে কারণেই অধ্যাদেশ। ইউপিএ সরকারের জমানায় কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগের জেরে সুপ্রিম কোর্ট ২০৪টি কয়লা খনি বণ্টন বাতিল করে দেয়। তার পরে মোদী সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, খনি নিলাম করা হবে। কিন্তু নানা শর্ত থাকার ফলে ২০৪টির মধ্যে মাত্র এখনও পর্যন্ত
মাত্র ২৯টি কয়লা খনি নিলাম করা গিয়েছে। এ বার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি নিলামে অংশ নিলে রাজকোষেও টাকার জোগান বাড়বে বলে সরকারের দাবি।