ছবি: সংগৃহীত।
শেষবার রান্নার গ্যাসে কত টাকা ভর্তুকি পেয়েছিলেন? প্রশ্ন শুনে বাংলার বিজেপি সাংসদের জবাব, “ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখতে হবে। ২০ টাকার মতো হবে।” বিজেপি সাংসদ ব্যতিক্রম নন। গত চার মাস ধরেই রান্নার গ্যাসে কেউ ১৯ টাকা, কেউ ২০ টাকার মতো নামমাত্র ভর্তুকি পাচ্ছেন। কেউ আবার তারও কম। আর অধিকাংশ মানুষই কোনও ভর্তুকিই পাচ্ছেন না।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের তেল ও গ্যাস মন্ত্রকের দাবি, আসলে ভর্তুকি দেওয়ার দরকার পড়ছে না। কারণ, বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম কমতে কমতে ভর্তুকি ছাড়া সিলিন্ডারের বাজার দর এত কমে এসেছে, যে ভর্তুকিতে মেলা সিলিন্ডারের দামের সঙ্গে বিশেষ ফারাক নেই। ফলে ভর্তুকি কার্যত দিতেই হচ্ছে না। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৯-এর জুলাই থেকে প্রতি মাসে ভর্তুকির সিলিন্ডারের দাম প্রায় ১০ টাকা করে বেড়েছে। এক বছরে বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। তার ফলেও ভর্তুকিতে পাওয়া সিলিন্ডারের দাম ও ভর্তুকি ছাড়া সিলিন্ডারের বাজার দর সমান হয়ে গিয়েছে। সরকার নামমাত্র ভর্তুকি দিয়ে বাকি টাকা সাশ্রয় করছে।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “আমরা বলেছিলাম, লকডাউনের ফলে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় তাঁদের হাতে নগদ টাকা দেওয়া হোক। এখন উল্টে দেখা যাচ্ছে, সরকার রান্নার গ্যাসে নগদ ভর্তুকি ছাঁটাই করছে। কারণ, মোদী সরকার দেউলিয়া। তাই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও এ দেশে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমল না। সরকার সেস বসিয়ে আয় করে গেল। সেই মুনাফা থেকেও মানুষকে নগদ সুরাহা দেওয়া যেত!”
আরও পড়ুন: পরীক্ষায় বিদেশনীতি, জোড়া কৌশল দিল্লির
বিরোধীদের প্রশ্ন, লকডাউনের ফলে মানুষের আয় কমেছে। এই অবস্থায় সরকার ভর্তুকি দিয়ে সিলিন্ডারের দাম কমাচ্ছে না কেন? সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য নীলোৎপল বসুকে অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা সিলিন্ডারে ৮.৫০ টাকা ভর্তুকি পেয়েছেন। নীলোৎপল বলেন, “আসলে সরকারের আয়ের যা অবস্থা, তাতে রাজকোষে টাকা নেই। চার মাসেই রাজকোষ ঘাটতি ১০৩ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে দেখা যাবে, একটা সিলিন্ডারে সরকার মানুষের থেকে যে পরিমাণ কর আদায় করছে,
মানুষকে তার অনেক কম ভর্তুকি দিচ্ছে। অর্থাৎ মাছের তেলে শুধু মাছই ভাজা হচ্ছে না, আরও অনেক কিছু ভাজা হচ্ছে।”
তেল ও গ্যাস মন্ত্রকের হিসেবে, মে থেকে অগস্ট, অধিকাংশ গ্রাহককেই নামমাত্র ভর্তুকি দিতে হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি বাবদ ৩৫,৬০৫ কোটি টাকা ধরা ছিল। এখন তেল মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, ৩,৫০৬ কোটি টাকাতেই রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি মিটিয়ে ফেলা যাবে। অর্থাৎ সাশ্রয় হবে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। বিরোধীরা ভর্তুকিতে পাওয়া সিলিন্ডারের দাম কমাতে আরও বেশি ভর্তুকির দাবি তুললেও তেল মন্ত্রকের এখনও তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, সিলিন্ডারের বাজার দর বেড়ে গেলে তখন বেশি ভর্তুকি দেওয়া হবে। ভর্তুকি তো তুলে দেওয়া হয়নি।
অধীরবাবু বলেন, “এ থেকেই মোদী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। এমনিতেই বাজারে মূল্যবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু সরকার পেট্রল-ডিজেলের দাম কমাচ্ছে না। রান্নার গ্যাসেও ভর্তুকি দিচ্ছে না। এগুলি আসলে রোগের উপসর্গ। রোগটা হল, অর্থনীতির পরিচালনায় মোদী সরকারের ব্যর্থতা।”