এখন থেকে ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে দু’জন চিকিৎসকের অনুমতি লাগবে।
নারীর নিজের শরীরের উপরে এবং সন্তানের জন্ম দেওয়া বা না-দেওয়ার সিদ্ধান্তের অধিকার আদায়ে লড়াই শুরু হয়েছিল অনেক দিনই। দাবি ছিল, গর্ভপাতের অধিকারের সময়সীমা বাড়ানো হোক। তিন দশকের পুরনো আইন সংশোধন করে সেই দাবিকে মান্যতা দিল কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, গর্ভস্থ ভ্রূণের গঠনগত বা জিনগত সমস্যা থাকলে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না। মেডিক্যাল বোর্ডই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ, ২৭ বা ২৮ সপ্তাহে ভ্রূণের কোনও ত্রুটি ধরা পড়লে বিষয়টি মেডিক্যাল বোর্ডে যাবে এবং তারা ছাড়পত্র দিলে গর্ভপাত করা যাবে। পাশাপাশি ধর্ষণের শিকার, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও নাবালিকাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঊর্ধ্বসীমা ২০ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এত দিন ২০ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত করাতে হলে আদালতে অনুমতি নিতে হত। এখন থেকে ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে দু’জন চিকিৎসকের অনুমতি লাগবে। দু’জনের এক জনকে সরকারি ডাক্তার হতে হবে। ২৪ সপ্তাহও পার হয়ে গেলে বিষয়টি ফের আদালতের বিচারাধীন হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।
আজ তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘মহিলাদের নিজের শরীর এবং সন্তান প্রসবের অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি অসামান্য পদক্ষেপ।’’ ৩১ তারিখ বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, সেখানেই ১৯৭১ সালের ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি’ আইনে সংশোধন করে ‘দ্য মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২০’ নিয়ে আসা হবে। মেডিক্যাল বোর্ড কাদের নিয়ে গঠিত হবে, তা কী ভাবে কাজ করবে এই সব খুঁটিনাটি সংশোধিত বিলে বলা থাকবে।
আরও পড়ুন: আদালতে আরও এক, ফের কি পিছোবে ফাঁসি?
জাভড়েকর আজ বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে নাবালিকা প্রথম পাঁচ মাস গর্ভবতী হওয়ার কথা বুঝতেই পারে না। ভ্রূণের অনেক সমস্যাও ২০ সপ্তাহে ধরা পড়ে না। নতুন নিয়মে এই সমস্যা কমবে। সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় অনেকে বেআইনি ভাবে গর্ভপাত করাতেন। তাতে অনেকের মৃত্যু হত। সেটাও এ বার কমবে।’’
কেন্দ্র মাস চারেক আগে অবশ্য অন্য সুরে কথা বলছিল। সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জমা পড়ে। তখন সরকার আদালতে বলেছিল, গর্ভস্থ ভ্রূণকে রক্ষা করার ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে। শরীরের উপরে নারীর নিজস্ব অধিকার তার চেয়ে বড় নয়।
চিকিৎসক মহল কিন্তু আজ নতুন নিয়মকেই স্বাগত জানিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য নিজে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, ভ্রূণের কিছু ‘কনজেনিট্যাল ডিফেক্ট’ সব সময় গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের মধ্যে নির্ণয় করা যায় না। তখন গর্ভপাতের অনুমতি পেতে আদালতে যেতে হয়। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘অনুমতি না মিললে আরও বড় সমস্যা। অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মাবে জেনেও তাকে গর্ভে ধারণ করা ও জন্ম দেওয়ার ট্রমা ভয়াবহ। নতুন সিদ্ধান্ত যথার্থ হয়েছে।’’
চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৮ বা ১৯ সপ্তাহে ‘ফিটাল অ্যানোম্যালি স্ক্যান’-এ ভ্রূণের সব ত্রুটি ধরা পড়ে না। বা ধরা পড়লেও মানসিক ধাক্কা সামলে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতে অনেকেই দেরি করে ফেলেন। ফলে সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়।’’ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন ‘ফগসি’ অনেক দিনই এই সময়সীমা বাড়াতে বলছিল। কারণ, ২৪ সপ্তাহের আগে ‘ফিটাল ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি’ করা যায় না। হাত-পা-শিরদাঁড়া-তলপেট-মস্তিষ্কের গঠনের অনেক ত্রুটিও বোঝা যায় না।’’