ফাইল ছবি
বেসরকারি শিল্পসংস্থার অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য সব দলের থেকে কয়েক যোজন মাইল এগিয়ে রয়েছে শাসক দল বিজেপি। আর্থিক সম্পদের নিরিখে দেশের অন্যতম ধনী দলও তারা। সেই বিজেপিকে দল হিসাবে আর্থিক ভাবে আরও শক্তিশালী করার জন্য আজ দলীয় সমর্থকদের কাছে অনুদান চেয়ে আবেদন করলেন নরেন্দ্র মোদী। তবে ওই আবেদন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নয়, দলীয় কর্মী হিসাবে করেছেন তিনি। নিজেও দলীয় তহবিলে চাঁদা দিয়েছেন হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে এ ভাবে দেশের মানুষের কাছে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য অনুদান চাওয়ার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন। সেই জন্মদিন উপলক্ষে দলকে আর্থিক ভাবে আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে দলীয় তহবিলে অনুদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিজেপি। কর্মসূচি চালু থাকবে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মতিথি পর্যন্ত। আজ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে ওই কর্মসূচির সূচনা করেন মোদী। পরে টুইটে সেই রসিদের ছবি দিয়ে মোদী লেখেন, “আমি বিজেপির দলীয় তহবিলে হাজার টাকা অনুদান দিয়েছি। দেশকে প্রাধান্য দেওয়ার যে নীতি ও আমাদের দলীয় কর্মীদের দেশকে আজীবন নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা করে যাওয়ার যে আদর্শ, তা ক্ষুদ্র দানে আরও মজবুত হবে। বিজেপিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করুন। ভারতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করুন।’’
মোদীর দেখাদেখি আজ অনুদান দিতে এগিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ, পীযূষ গয়ালেরা। অনুদান দেন দলীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। পরে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি টুইটে বলেন, ‘‘বিজেপিকে মজবুত করতে আমি নমো অ্যাপের ডোনেশন ব্যবস্থা ব্যবহার করে সামান্য অবদান রেখেছি। আপনারাও রেফারেল কোড ব্যবহার করে এই গণ আন্দোলনে আপনাদের পরিবার ও পরিচিতদের যুক্ত করতে পারেন। এই সাহায্য নিঃস্বার্থ ভাবে বিজেপিকে জনগণের সেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’’ পরে কর্মীদের জন্য একটি খোলা চিঠিতে এই অনুদান কর্মসূচিতে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষকে যুক্ত করার ডাক দিয়েছেন নড্ডা। তিনি বলেন, জেলা, রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে যে কর্মীরা সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে এই অনুদানে জুড়তে পারবেন, তাদের বিশেষ সম্মান জানাবে দল।
বছর ঘুরলেই উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোট। তার আগে এই ভাবে অনুদান চাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, এই ক্ষুদ্র অনুদান কর্মসূচিতে পাঁচ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ সাহায্য করা যাবে।
এ দেশে দলীয় কর্মী, বেসরকারি সংস্থার অনুদানের অর্থেই রাজনৈতিক দলগুলি চলে। বাম বিধায়ক-সাংসদদের ভাতার একটি বড় অংশ দলীয় তহবিলে জমা পড়ে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাধিকবার দলীয় তহবিলে অর্থ দিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি দলের হয়ে অনুদান চাইছেন, এটা কিছুটা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিরোধীদের মতে, এটা প্রধানমন্ত্রীর পদের অপব্যবহার। যদিও বিজেপি শিবিরের পাল্টা যুক্তি, দল চালাতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয়। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নন, দলীয় কর্মী হিসাবে সহকর্মীদের কাছে অনুদানের জন্য আহ্বান করেছেন। নিজের ব্যক্তিগত টুইটার হ্যান্ডল থেকে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, কিন্তু তিনি একই সঙ্গে বিজেপির কর্মীও বটে। সেই কারণে নিজে অনুদান দিয়েছেন ও দলীয় কর্মীদের কাছে দলের জন্য অনুদান চেয়েছেন।