শিবাজির মূর্তির সামনে বক্তৃতা নরেন্দ্র মোদীর। শনিবার মুম্বই মেট্রোর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে। ছবি: রয়টার্স।
মরাঠা রাজা ছত্রপতি শিবাজির ঐতিহ্যের দখল নিতে সংঘাত বাড়ল মহারাষ্ট্রের শাসক জোট শিবসেনা ও বিজেপির। আজ আরব সাগরের বুকে শিবাজির বিশাল মূর্তির জন্য জলপূজন ও মিউজিয়ামের শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্পর্কের টানাপড়েন থাকলেও রাজনীতির ছক কষে সেই অনুষ্ঠানে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষের কিছু ক্ষণের মধ্যেই শিবসেনার তরফে বিজেপির কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ জানানো হয়। অভিযোগ, শিবাজি স্মারকের অনুষ্ঠান রাজনৈতিক ভাবে ‘দখল’ করে নিয়েছে বিজেপি। সরকারি অনুষ্ঠানে সব দলকে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে ডাকা হল না কেন, সে প্রশ্ন তোলে উদ্ধবের দল। রামমন্দির নিয়েও বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছে শিবসেনা। দলের মুখপাত্রের মন্তব্য, লোকসভায় বিপুল গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করতে পারেনি বিজেপি। সেই ‘ব্যর্থতা’ তাঁদের স্বীকার করে নেওয়া উচিত।
মরাঠা সমাজের নায়ক শিবাজিকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন বালসাহেব ঠাকরে। তাঁর মৃত্যুর পরে শিবসেনা যখন দুর্বল, তখন সেই ঐতিহ্যের দখল নিতে তৎপর হয়েছে বিজেপি। শিবাজিকে নিয়ে ধুমধাম করে মোদীর অনুষ্ঠান সে কথাকেই বুঝিয়ে দিয়েছে। মুম্বইয়ে মেরিন ড্রাইভের উল্টো দিকে আরব সাগরের চার কিলোমিটার ভিতরে এই ‘ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ মেমোরিয়াল’ নির্মাণের অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যাপক প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। এই প্রকল্পের জন্য খরচ হবে প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা। উপকূলরক্ষী বাহিনীর হভারক্রাফটে চেপে আজ এই শিবাজি স্মারকের ‘জল-পূজন’ সারেন মোদী। বিরোধীদের প্রশ্ন, এত খরচ করে শিবাজির মূর্তি তৈরির যৌক্তিকতা কী? মানুষের উন্নয়নের বদলে কেনই বা এটিই কেন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। মোদী অবশ্য উন্নয়নের প্রশ্নেই বিরোধীদের যাবতীয় প্রশ্নকে কার্যত উড়িয়ে দেন এ দিন। মনে করিয়ে দেন শুধু বীরত্ব নয়, সুশাসনের জন্যেও শিবাজি সকলের প্রেরণা। এটাও বুঝিয়ে দেন, শিবসেনার উপর থেকে শিবাজির ছত্রচ্ছায়া সরিয়ে নিতে বীরত্ব নয় সুশাসনই হাতিয়ার মোদীর। এবং সুশাসনের প্রসঙ্গেই তিনি উল্লেখ করেন, পুণে ও মুম্বইয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে কী বিপুল অর্থ ব্যয় করতে চলেছে বিজেপি ও তাঁর সরকার। আজ এক দিনেই শুধু মুম্বইয়ে ৫৫ হাজার কোটি এবং মহারাষ্ট্রের বাকি এলাকায় ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মোদী। এর মধ্যে দু’টি মেট্রো প্রকল্পও রয়েছে। পরে টুইটারেও প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘সঙ্কট আর লড়াইয়ের মধ্যেও শিবাজি মহারাজ সুশাসনের পথে থাকতেন।’’
১৯২ মিটারের শিবাজি মূর্তিটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। এর কৃতিত্ব নিয়েও শিবসেনা-বিজেপির টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই। শিবসেনার দাবি, বালসাহেব ঠাকরে এই প্রকল্পের দাবি তুলেছিলেন। সে জন্যই উদ্ধব অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। আর মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বিনোদ তাওড়ের মন্তব্য, ‘‘এর আগে রাজ্যের কংগ্রেস-এনসিপি সরকারের জমানায় এই প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা ছিল কাগজে কলমে। কিন্তু আমরা এর রূপায়ণ করছি।’’
মোদীর মুম্বইয়ের সভার সময় প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছিল কংগ্রেস। মৌন মিছিল করে মোদীর সভার দিকে যেতে চাইছিল তারা। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জয় নিরুপমের অভিযোগ, তাঁর বাসভবনের বাইরে বিরাট সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করে তাঁকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়।