বাছাই নিয়েই প্রশ্ন তুলল তৃণমূল
Tamil Nadu

MK Stalin: ট্যাবলো বাতিলে ক্ষুব্ধ স্ট্যালিন, চিঠি মোদীকে

ঘটনাচক্রে, ২০২১-এ যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু— এই তিনটি রাজ্যেই বিজেপি হেরেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৮
Share:

এম কে স্ট্যালিন। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের পরে এ বার নাম তামিলনাড়ুরও!

Advertisement

দিল্লির রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের তামিলনাড়ুর ট্যাবলো বাদ পড়ায় আজ দক্ষিণের ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করলেন।

এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর ভিত্তি করে ট্যাবলো তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা বাদ পড়ে যাওয়ায় গত রবিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। কেরলের বাম সরকারও সে রাজ্যের সমাজ সংস্কারক শ্রী নারায়ণ গুরুকে নিয়ে ট্যাবলো বাদ দেওয়ায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

Advertisement

একই ভাবে তামিলনাড়ু সরকারও রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামী ভি ও চিদম্বরনর, মহাকবি ভারথিয়ার, রাণি ভেলু নাচিয়ার, মারুথু ভ্রাতৃদ্বয়কে নিয়ে ট্যাবলো তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল। তা বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ স্ট্যালিন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি নিজে তো হতাশ বটেই, রাজ্যেরও মানুষও এ বিষয়ে চিন্তিত।

ঘটনাচক্রে, ২০২১-এ যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু— এই তিনটি রাজ্যেই বিজেপি হেরেছিল। তার মধ্যে তামিলনাড়ুতে তারা মাত্র ৪টি আসন পেলেও কেরল থেকে শূন্য হাতে ফিরেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, এই তিন রাজ্যের ট্যাবলো বাদ দেওয়ার পিছনে কি সেই হারের রাজনীতিই কাজ করছে?

কেন্দ্রকে অস্বস্তিতে ফেলে আজ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মোদী সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, এটা কেন্দ্রের সস্তা রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়। বাবুল টুইট করে বলেছেন, নেতাজিকে উৎসর্গ করা ট্যাবলো বাদ দেওয়াটা বিরাট লজ্জার। এর পিছনে কী
ধরনের রাজনীতি কাজ করেছে, তা ভাবা উচিত।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা কুচকাওয়াজের দায়িত্বে থাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। কিন্তু একের পর এক মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করায় আজ সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, ‘কুচকাওয়াজের ট্যাবলো বাদ পড়াকে আঞ্চলিক অস্মিতার সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ভাবে যোগ করা হচ্ছে এবং একে রাজ্যের মানুষের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অপমান হিসেবে দেখানো হচ্ছে। প্রতি বছর একই চিত্রনাট্য।’ মোদী সরকারের ওই সূত্রের আরও বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীদের সম্ভবত কোনও ইতিবাচক কর্মসূচি নেই। সরকারি প্রক্রিয়া মেনে সিদ্ধান্তকে তাঁরা কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত হিসেবে তুলে ধরছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোরই
ক্ষতি হবে।

রাজনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রী এ বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলছেন না কেন? ‘সরকারি সূত্র’-র আড়ালে কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিশানা করা হচ্ছে? বিজেপির প্রবীণ নেতা তথাগত রায় আজ প্রধানমন্ত্রীকে আর্জি জানিয়েছেন, কুচকাওয়াজে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলোকে অনুমতি দেওয়া হোক।

তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বারবার, পরিকল্পিত ভাবে বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতিকে অপমান করছে। নেতাজির ট্যাবলো খারিজ হওয়ায় কেন্দ্রের দ্বিচারিতাই স্পষ্ট। কেন্দ্রের সরকারি সূত্রের পাল্টা যুক্তি, এ বছর কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের ট্যাবলোই নেতাজিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে। ফলে তাঁকে অপমান করার প্রশ্নই নেই। যার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল সূত্রের কটাক্ষ, যে পূর্ত দফতরের কাজ সড়ক-সেতু বানানো, নেতাজিকে নিয়ে তাদের ট্যাবলো নেওযা হল, অথচ পশ্চিমবঙ্গেরটা বাদ! সেই সঙ্গেই সূত্রটির প্রশ্ন, কোন যুক্তিতে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে কেদারনাথ ও বারাণসীর মন্দির গুরুত্ব পায়, অথচ কলকাতার কালিঘাট মন্দির, পুরীর জগন্নাথ
মন্দির বা গুজরাতের সোমনাথ
মন্দির বাদ যায়? উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের ভোটের জন্যই কি ওই
দুই মন্দিরের জায়গা হয়েছে,
বাকিরা বাদ?

নির্মলা সীতারামনের মতো শীর্ষ মন্ত্রীরা আজ যুক্তি দিয়ে জানিয়েছেন, মোদী সরকার ট্যাবলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় না। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি কমিটি সব রাজ্যের প্রস্তাব খতিয়ে দেখে সুপারিশ করে, কোন কোন রাজ্য, মন্ত্রকের ট্যাবলো থাকবে। এ বার সময়ের অভাবে সব প্রস্তাব গ্রহণ করা যায়নি। ৫৬টি প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র ২১টি বাছাই করা হয়েছে। স্বাভাবিক
ভাবেই খারিজ হওয়া প্রস্তাবের সংখ্যা বেশি। যার পাল্টা তৃণমূল সূত্রে প্রশ্ন করা হয়েছে, এই ট্যাবলো বাছাই কমিটিতে কারা দায়িত্বে থাকেন? তাঁদের কারা নিয়োগ করেন?
তাঁদের যোগ্যতাই বা কী? বিরোধী শিবিরের অনেকেরই অভিযোগ, এই কমিটিতে আসলে আরএসএস-ঘনিষ্ঠরাই রয়েছেন।

কেন্দ্রের দাবি, ওই বিশেষজ্ঞ কমিটিই কেরল, তামিললাড়ু, পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাব খারিজ করেছে। এই প্রক্রিয়া মেনেই মোদী জমানায় ২০১৮ এবং ২০২১ সালে কেরলের ট্যাবলো গৃহীত হয়েছে। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ সালে তামিলনাড়ুর ট্যাবলো কুচকাওয়াজে অংশ নিযেছে। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলোও অংশ নিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement