মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ও রাজ্যসভায় সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগা ও অনাস্থার পক্ষে ভোট দেওয়ার পরে মিজ়োরামের লোকসভা ও রাজ্যসভার দুই সাংসদ সি লালরোসাঙ্গা ও কে ভানলালভেনা শনিবার রাজ্যে পৌঁছে বীরের অভ্যর্থনা পেলেন। বিমানবন্দরে পরম্পরাগত যোদ্ধার সাজে সজ্জিত জনতা তাঁদের স্বাগত জানায়। সংবর্ধনা সভা হয় এমএনএফের সদর দফতরে।
মণিপুরে কুকিদের উপরে অত্যাচার, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, অরণ্য আইনে সংরক্ষণের প্রশ্নে ক্রমেই এমএনএফের সঙ্গে এনডিএর দূরত্ব বাড়ছে। তার বড় কারণ, নভেম্বরে রাজ্যে ভোট। তাই তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী জ়োরাম ভোটের অঙ্ক কষেই এনডিএর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন। কিন্তু সরাসরি বলছেন না যে তাঁরা এনডিএর সঙ্গে নেই। বরং লোকসভায় এনডিএর বিরুদ্ধে ভোটদান প্রসঙ্গে দিল্লিতে জ়োরাম বলেন, “দিল্লিতে দুটি ভরকেন্দ্রের মধ্যে আমরা একেবারেই কয়েকটি বিষয়ের ভিত্তিতে এনডিএর সঙ্গে থাকা বেছে নিয়েছি। তাই এনডিএকে কখন সমর্থন করব, বা করব না- তা নির্ভর করবে বিষয়ের উপরে।” তিনি শরণার্থী সমস্যা নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বলেন, “কুকি-চিন-জোমি ভাইবোনেরা মায়ানমার, বাংলাদেশ ও মণিপুর থেকে প্রাণভয়ে মিজ়োরামে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা এত জনের ভরণপোষণ বাবদ মানবিকতার খাতিরে মাত্র ১০ কোটি টাকা কয়েক মাস ধরে চাইছি। কিন্তু কেন্দ্র দিল মাত্র ৩ কোটি টাকা!” জ়োরামের গর্ব, “কেন্দ্রের নির্দেশ না মেনেই আমরা মায়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছি। দেশের আর কোনও রাজনৈতিক দল মোদী ও কেন্দ্রের সরাসরি বিরোধিতা করে এই সাহস দেখাতে পারেনি।”
কার্যত এই গর্বই আসন্ন ভোটে তাঁর তুরুপের তাস। রাজ্যে ভোটের আগে গেরুয়া দল বিজেপির শরিক হওয়া নিয়ে এমএনএফের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে পারেন বিরোধীরা। তাই খ্রিস্টানদের পক্ষে রাখতে ও বিরোধীদের অস্ত্র কাড়তে সব কুকি যে তাঁদেরই রক্ত, তাঁদেরই ভাই-বোন সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় নিরলস পরিশ্রম করছেন তিনি। বলে দিয়েছেন, এমএনএফের জন্মই হয়েছে সব জো-কুকিদের এক ছাতার তলায় আনতে।
অনাস্থায় এনডিএ-র বিপক্ষে ভোট দেওয়া লালরোসাঙ্গা বলেন, “আমি এনডিএ নেতাদের কাছে বারবার মণিপুর প্রসঙ্গ উত্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছি। তা খারিজ হয়েছে। লোকসভাতেও স্পিকারের কাছে যত বার কথা বলার আবেদন করেছি আমার ও মণিপুরের সাংসদদের আবেদন তিনি খারিজ করেছেন। এখন এনডিএর কিছু নেতা আমার সঙ্গে কথা বলছেন না, অচ্ছুৎ-এর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক নেতা তো আমার সঙ্গে হাত মেলাতেও রাজি হননি।”
রাজ্যসভায় অমিত শাহের বক্তব্যের প্রতিবাদ করা ভানলালভেনাকে জোমি কাউন্সিলও সংবর্ধনা দেয়। তারা মুখ্যমন্ত্রী জ়োরামথাঙ্গার সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, তিনি মায়ানমার, বাংলাদেশ ও মণিপুরের জো-চিনদের জন্যে যা করেছেন তাতে এখন জো গোষ্ঠীর কাছে তিনি পিতার সমান।
জ়োরামের ভূমিকায় অস্বস্তিতে পড়লেও বিজেপিও চায় না মিজ়োরাম এনডিএ তথা নেডা জোটের হাতছাড়া হোক। তাই জ়োরাম ও তাঁর দলের বিদ্রোহের পরেও এনডিএর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। বরং মণিপুরের গণকবর বিতর্কে জ়োরামের মধ্যস্থতার জন্য তাঁকে ফোন করে ধন্যবাদ দেন নেডার মাথা হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
এ দিকে, মণিপুর হাই কোর্টের নির্দেশের জেরে রাজ্য সরকার প্রায় ৮০ দিন পরে রাজ্যে ব্রডব্যান্ড ও ফাইবার ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করলেও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও বন্ধ। তা চালু করার দাবিতে বহু জনস্বার্থ আবেদন জমা পড়েছে হাই কোর্টে। হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিল, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর যেন পর্যায়ক্রমে, প্রতি ব্যক্তির বিষয়, প্রেক্ষাপট ও পরিচয় যাচাই করার পরে তাঁদের নম্বর সাদা তালিকাভুক্ত করা ও তাতে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করার ব্যবস্থা করে। বিচারপতি এ বিমল সিংহ ও বিচারপতি গুণেশ্বর শর্মার বেঞ্চ ৩১ অগস্টের শুনানিতে স্বরাষ্ট্র দফতরকে রিপোর্ট দিতে বলেছে।